ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার পর পর বদলি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে মাত্র তিন মাস আট দিন দায়িত্ব পালনের পর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে বদলি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডিএনসিসির অভ্যন্তরীণ সূত্র ও কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, এই বদলি একেবারে আকস্মিক নয়। এর পেছনে রয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে সিইও-সহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরোধ এবং গাবতলী পশুর হাটের ইজারা সংক্রান্ত মতানৈক্য।
গত ৭ এপ্রিল গাবতলী হাটের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে “মেসার্স আরাত মোটর”-কে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এই কমিটির প্রধান ছিলেন সিইও কামরুজ্জামান। অথচ পরবর্তীতে প্রশাসক খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত দিয়ে দরপত্র বাতিল করেন। প্রশাসকের যুক্তি ছিল—দরপত্র প্রক্রিয়ায় ‘ভুল’ হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা।
৩০ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দরপত্র বাতিল করে খাস আদায়ের নামে প্রশাসকের ‘পছন্দের’ লোকদের মাধ্যমে ইজারার অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
সিইও ছাড়াও গত এপ্রিল মাসে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানকেও হঠাৎ বদলি করা হয়। উভয়ের ক্ষেত্রেও প্রশাসকের সঙ্গে নীতিগত মতবিরোধের বিষয় উঠে আসে।
মনিরুজ্জামান বিরোধিতায় ছিলেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও গৃহকর ডিজিটাইজেশন নিয়ে।
এই পটভূমিতে অনেকেই মনে করছেন, “প্রশাসকের পছন্দ না হলেই বদলি”—এমন একটি প্রশাসনিক সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে ডিএনসিসিতে, যা ভবিষ্যতে দক্ষ আমলাদের নিরুৎসাহিত করতে পারে।
২০ মে গুলশান-২-এ নগর ভবনের সামনে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা মোহাম্মদ এজাজের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
এজাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ—নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়েও তিনি একাধারে প্রশাসক, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও আর্থিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছেন। এ অবস্থায় সংস্থার অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
বদলি প্রসঙ্গে আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেছেন,“আমি সরকারের একজন আজ্ঞাবহ কর্মচারী। সরকার যেখানে পদায়ন করবে, সেখানে যেতে বাধ্য। সিটি করপোরেশন ভালো চলুক, এটাই চাই।”