জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁঃ মোঃ হাবিবুর রহমান:
ঈদুল আজহার আর মাত্র সাত দিন বাকি। এ সময় ঘনিয়ে আসতেই নওগাঁর কোরবানির পশুর হাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে সরগরম হাটগুলো। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ব্যাপারিদের পাশাপাশি স্থানীয় খামারিরাও অংশ নিচ্ছেন এই বেচাকেনায়।
ছোট-মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি
বিক্রেতারা জানান, এবার ছোট ও মাঝারি আকারের দেশি গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বড় গরুর ক্রেতা তুলনামূলক কম হওয়ায় অনেক বিক্রেতা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, গো-খাদ্য, খড় ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ার পরও ক্রেতারা দাম তুলনামূলকভাবে কম বলছেন। এতে লাভ তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে মূলধনও তুলতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন তারা।
ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি
অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, গরুর দাম গত বছরের তুলনায় ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি ধরা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এখনই গরু কিনলে বাড়িতে রেখে লালন-পালন করা কষ্টকর, তাই ঈদের এক-দুই দিন আগে কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
জেলায় হাট বসেছে ৩৬টি, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, এবছর নওগাঁয় ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারে প্রায় সাত লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার চাহিদা রয়েছে প্রায় তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি পশুর। এই অতিরিক্ত পশু অন্যান্য জেলায় সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। গরু বেচাকেনার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩৬টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে।
প্রবেশ করছে না ভারতীয় গরু, দেশি গরুর দাপট
নওগাঁ সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারতীয় গরু প্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। ফলে হাটগুলোতে দেখা যাচ্ছে দেশীয় গরুর দাপট। দেশি জাত, অস্ট্রেলিয়ান ও ফ্রিজিয়ান প্রজাতির গরু তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান ও আকর্ষণীয় হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি।
খামারিদের দুর্ভাবনা, বড় গরুর দাম উঠছে না
চৌবাড়িয়া হাটে গরু বিক্রেতা আলমগীর বলেন, “গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গরু পালনে প্রতি পশুতে ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু বড় গরুর দাম উঠছে না। লস হলেও বিক্রি করতে হবে, না হলে ফেরত নিয়ে গেলে খরচ আরও বাড়বে।”
একই অভিযোগ মোসলেম আলী ও আনারুল ইসলামের। তাদের বক্তব্য, “বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে থাকা গরুর। বড় গরুর দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না।”
প্রশাসনের প্রস্তুতি ও আশ্বাস
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান জানান, “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালনের জন্য আগে থেকেই প্রচারণা চালানো হয়েছে। জেলার সব হাটে মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকায় সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। আশা করছি, খামারিরা এবার ভালো লাভ করতে পারবেন।”