শাহ আলম জাহাঙ্গীর, কুমিল্লা প্রতিনিধি:
রাত পোহালেই ২৪ মে—মুরাদনগরের বাখরাবাদ গ্রামবাসীর কাছে এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি স্বজনহারানোর বেদনায় ভারী হয়ে ওঠা এক শোকাবহ স্মৃতির দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুমিল্লার মুরাদনগরের হিন্দু অধ্যুষিত বাখরাবাদ গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় চালিয়েছিল এক ভয়াবহ গণহত্যা।
এ দিনে শতাধিক নারী-পুরুষের তাজা রক্ত মিশে গিয়েছিল তিতাস নদীর স্রোতে। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার স্মরণে গ্রামে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিসৌধ—“প্রদীপ্ত তিতাস”। শহিদ সন্তান দুলাল সাহা নিজস্ব অর্থায়নে রামচন্দ্রপুর-মুরাদনগর সড়কের পাশে দুই শতক জমিতে এই স্মৃতিস্মারক নির্মাণ করেন। তবে নির্মাণের পাঁচ বছর পার হলেও আজও স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন হয়নি।
গণহত্যার স্মৃতিচারণ
শহিদ সন্তান অনুকূল চন্দ্র দাস (৭৫) Said,
“সেদিন ছিল সোমবার। ভোররাতে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা গ্রাম ঘিরে ফেলে। মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে যখন মাঠে কাজে যাচ্ছিল, তখনই গুলি চালিয়ে হত্যা শুরু করে। আমার কাকা লক্ষ্মণ চন্দ্র দাসকে মেরে ফেলে, বাবাসহ ২১ জনকে ধরে নিয়ে যায় দেবিদ্বারে—সেখানে তাদের লাইন ধরে গুলি করে গণকবরে ফেলে দেয়।”
ঘটনার ভয়াবহতায় অনেক নারীও নির্যাতনের শিকার হন। ঢাকার বদরুন্নেসা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ স্বপ্না রানী সাহা-র পিতা ধরণী মোহন সাহাও নিহত হন গুলিতে। স্থানীয় সূত্র জানায়, বেঁচে যাওয়া তিন যুবকের একজন ছিলেন দুলাল চন্দ্র সাহা, যিনি আজো ইতিহাস ধরে রাখার সংগ্রামে নিয়োজিত।
উদ্যোগ থেমে যায় রাজনৈতিক প্রতিকূলতায়
স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ সংরক্ষণ পরিষদ নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়, যারা আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, স্মারকগ্রন্থ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি সমীর বরণ সরকার Said,
“দুই বছর আয়োজনের পর রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতায় আর কিছু করা যায়নি।”
প্রশাসনের উদাসীনতা, শহিদ সন্তানদের হতাশা
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান Said,
“এ বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে শহিদ সন্তান দুলাল সাহা মনে করেন,
“রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে হয়তো স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন হবে। তবে দেরিতে হলেও এটি হওয়া জরুরি—নবপ্রজন্ম যেন জানে বাখরাবাদের রক্তাক্ত ইতিহাস।”