Shahjahan Ali Manon, Saidpur (Nilphamari) Representative:
মিথ্যে মামলায় আসামী করায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনায় লাশ সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) বিকাল সাড়ে ৫ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালীপুর ইউনিয়নের আমজাদের মোড়ে এই আয়োজন করা হয়।
ওই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের লক্ষণপুর জোদদারপাড়ার মোসলেম সরদার পরিবার এই সংবাদ সম্মেলন করেছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ বসত বাড়িতে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে এই মিথ্যে মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা বশত: মামলার শিকার হওয়ায় মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রধান আসামী মোসলেম সরদার (৬০) মারা গেছেন। তাই এই মৃত্যুকে হত্যাকান্ড দাবি করে প্রতিবাদ জানান এবং বিচার চান বক্তারা।
বক্তব্য রাখেন, সৈয়দপুর জেলা বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাহিদুল হক বাবলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, ওয়ার্ড বিএনপির সহ সভাপতি আলমগীর হোসেন, নিহতের ছোট ভাই তসলিম সরদার, ভাতিজা বাবলু সরদার, পৌত্র মেহেদী হাসান জীবন, গৃহবধু মৌসুমী ও এলাকাবাসী জহুরুল শেখ।
শাহিদুল হক বাবলু বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মোসলেম সরদার পরিবার ও বাছান জোদদার পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। গত ১৪ ও ১৫ মে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে মিমাংসায় বসে। উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখে একটা সমাধানে উপনিত হয়।
এতে বাছান জোতদারের পরিবার কাগজ অনুযায়ী তাদের দখলে থাকা ২০ শতক জমি সরদার পরিবারকে ফেরত দিতে সম্মত হয়। সে অনুযায়ী একটা খসরা আপসনামা লিখিত হয়। যা পরবর্তীতে জুডিশিয়াল স্টাম্পে লিখিতভাবে অথবা রেজিস্ট্রি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য এক সপ্তাহ সময় নেয়াও হয়।
কিন্তু তার আগেই গত ১৮ মে মৃত বাছান জোতদারের ছেলে আব্দুল আজিজ ও তার ভাইয়ের বসত বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে মোসলেম সরদারসহ তার পরিবারের ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও অজ্ঞাত ৭ জনকে আসামী করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
এর প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযোগটি একতরফা তদন্ত করে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। এতে মোসলেম সরদার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমতাবস্থায় তিনি ৩ দিন আগে হার্ট অ্যাটাক করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং শনিবার সকালে মারা যান। চিকিৎসকের মতে তার কোন শারীরিক রোগ নেই। তিনি টেনশনে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মোসলেম সরদার যেখানে ২০ জমি ফেরত পাচ্ছেন, সেখানে তিনি কেন প্রতিপক্ষের বসত বাড়িতে আগুন দিবেন? এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। বরং আব্দুল আজিজরা নিজেরাই আগুন লাগিয়ে তার দোষ চাপিয়েছে। যাতে জমি না দিতে হয় এবং প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে রাখতে পারে। আমরা অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং মিথ্যে মামলা দিয়ে একজন নিরোপরাধ মানুষকে আসামী করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কারণ এটা স্পষ্ট হত্যাকান্ড।
তসলিম সরদার বলেন, আমার ভাইয়ের কোন রোগ ছিলনা। মিথ্যে মামলায় আসামী করায় তিনি অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছেন এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেকারণে হার্ট অ্যাটাক করেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ আব্দুল আজিজ, একরামুল সহ অন্যান্যরা বলে বেড়াচ্ছে একজনকে খেয়েছি। বাকিগুলোকেও খাবো। এমনকি এলাকার আরেকটা পরিবারের সাথেও তাদের বিরোধ। সেই পরিবারের লোকজনকেও এই মামলায় ঢুকিয়ে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
একই অভিযোগ করেন অন্যান্যরা। তারা প্রশাসনের প্রতি নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক সঠিক ঘটনা উদঘাটন করে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। এসময় উপস্থিত এলাকার কয়েক শত নারী পুরুষ সমস্বরে বিচারের জন্য শ্লোগান দেয়।
এব্যাপারে আব্দুল আজিজ জোতদারের সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি বলেন, মামলা সত্য না মিথ্যা তা তদন্তেই প্রমাণিত হবে। আর কারো স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যাকান্ড বলাইতো বড় মিথ্যেচার। আমাদের দুই পরিবারের ১০ জনকে পেট্রোল ছিটিয়ে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমরা বেঁচে গেছি। এতে সর্বস্ব হারিয়ে আমরা নিঃস্ব। এর সঠিক বিচার চাই।