জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর:
ঈদের সকাল হোক কিংবা গভীর রাত—পদ্মা কখনও কাউকে ছাড় দেয় না। আর এ বছরের কোরবানির ঈদের ভোর বেলায় শরীয়তপুরের মাঝিরঘাট এলাকায় ধসে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধের প্রায় ২৫০ মিটার অংশ। এই ধস যেন নদীপারের মানুষের ঈদের আনন্দকে মুহূর্তেই পরিণত করেছে চরম বেদনায়।
এমনবস্থায় প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে নিজ ভিটেমাটি রক্ষায় ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজ করছেন স্থানীয় যুবকরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ও বাঁধ রক্ষায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছে।
” বাঁধের ইতিহাসে ‘ধস’: কাজের চেয়ে কথার জোর বেশি”
২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১১০ কোটি টাকা। এটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
তবে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে বাঁধে প্রথম ধস দেখা দেয়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মাত্র ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কিছু অংশে জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মেরামতের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকভাবে কাজ না হওয়ায় বর্ষা শুরু হতেই ফের দেখা দেয় নতুন ধস।
“ছুটিতে ‘ছুটি’ নেয় প্রকৌশলী, প্রকৃতি নেয় প্রতিশোধ!
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ঈদের ১৫ দিন আগেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাঁধ রক্ষায় ধীরগতির কাজ এবং নিম্নমানের গাছ ও জিওব্যাগ প্লেসিংয়ে ভর করে প্রকল্পটি যেন ধসে পড়ার অপেক্ষায়ই ছিল।
জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বণিক দাবি করেন,”১০০ মিটার জিওব্যাগ ডাম্পিং সম্পন্ন হয়েছে, এলাকা ঝুঁকিমুক্ত। কাজ বন্ধ ঈদের ছুটির জন্য।”
তবে ঈদের দিন ৭ জুন ভোরেই প্রকৃতি তাঁর দাবির জবাব দিয়ে দেয়-ধসে পড়ে ২৫০ মিটার অংশ। প্রশ্ন তোলা হয় নিম্নমানের গাছ দিয়ে জিওব্যাগ প্লেসিং ঠেকানোর বিষয়ে। উত্তরে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন,“আপনার সন্ধানে এর চেয়ে ভালো মানের গাছ থাকলে বলেন, এখনো ১০০ পিস গাছ দরকার।”
পরিসংখ্যানে ধসের গহ্বর;
চুক্তিমূল্য: ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা
ঠিকাদার: মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোং (প্রতিনিধি: মাহমুদ বাবু, মাদারীপুর)
প্রকল্প শুরু: ২৪ এপ্রিল ২০২৫
প্রকল্পের দাবি করা দৈর্ঘ্য: ১০০ মিটার
ধসে পড়া অংশ: ২৫০ মিটার
স্থায়ী সমাধান না হলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা;
স্থানীয়রা বলছেন, এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে রক্ষা করা যাবে না নদীপারের ঘরবাড়ি, রাস্তা, হাটবাজার।
প্রতিদিন ভাঙন গ্রাস করছে মানুষের বসতভিটা। নদীর গর্জনে তারা এখন নিঃশ্বাস ফেলছে ভয়ে।
এটি শুধু একটি ধস নয়, এটি এক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। প্রকল্প, অর্থ ও জনবসতির জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন যদি হয় ‘অব্যবস্থাপনা’, তবে ভবিষ্যৎ আরও ভয়াবহ। সময়মতো কাজ না করে প্রকৃতির প্রতিশোধ ঠেকানো সম্ভব নয়।