Joypurhat District Representative:
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নে রাজনৈতিক দ্বিচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আলোচনায় আব্দুস সামাদ বাবু মন্ডল।
জানা য়ায় তার ছোট ভাই মশিউর রহমান শামীম দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। শামীম বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে আছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন,আব্দুস সামাদ বাবু মন্ডল ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। তার সেই যোগদানের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মজিদ মোল্লা, ক্ষেতলাল পৌরসভার সাবেক মেয়র সিরাজুল ইসলামসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সেই যোগদানের পর গরু খাসির জবাই করে কালাই ক্ষেতলাল আক্কেলপুরের এমপি স্বপন ও তার সফর সঙ্গীদের জমকালো আয়োজনে৷ ভুরিভোজ করান আব্দুস সামাদ মন্ডলের নিজ বাড়িতে এমপি স্বপ্নের সঙ্গে একাধিক ছবি তার রয়েছে৷৷
অভিযোগ আরও রয়েছে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সময় সাধারণ মানুষের ওপর তার ভাই মশিউর রহমান রাজনৈতিক প্রতিপত্তি খাটিয়ে নির্যাতন চালিয়েছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা দীর্ঘ ১৭ বছর তাদের অত্যাচারে মামলা, হামলা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।
মামুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি নিয়েও বিতর্ক
সাম্প্রতিক সময়ে আব্দুস সামাদ বাবু মন্ডল মামুদপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিএনপি অঙ্গনে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, একজন ব্যক্তি যিনি ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং যিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় সুবিধা ভোগ করেছেন, তিনি কীভাবে বিএনপি পরিচয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হন?
ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর নাজমুল হোসেন বলেন মামুদদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুর্বৃত্ত এই প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্যাডার শক্তি গঠনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির আবাদি ৪৩ বিঘা জমি ব্যবহার করে আসছেন, যার থেকে অর্জিত কোনো আয় প্রতিষ্ঠান ফান্ডে জমা হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তপূর্বক এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সহ সাবেক সভাপতির আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক৷
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, এই সম্পত্তি থেকে যে রাজস্ব বা আয় হওয়ার কথা ছিল, তার কোনো হিসাব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির কাছে নেই। বরং ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পত্তির ওপর ব্যক্তিগত স্বার্থে দখল বজায় রাখা হয়েছে। তদন্ত ও জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন বলেন, “আমরা দলীয়ভাবে দীর্ঘদিন হয়রানির শিকার হয়েছি, আজ যারা সুবিধাভোগী তারা আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করছে-এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।”
রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন সওকত
বলেন,“যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা সুবিধা নিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখা হবে।
মামুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন,বাবু মন্ডলের ভাই মশিউর রহমান শামীম গত১৫ বছর ইউনিয়ন শাসন করেছেন, তার বড় ভাই হওয়ায় বাবু মন্ডলও আওয়ামী লীগের হয়রানির শিকার হননি। তাহলে তিনি কীভাবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলেন?”
বিষয়ে জানতে চাইলে আঃ ছামাদ আবু মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরং বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমি এখনো জেলা বিএনপির একটি পদে আছি।”
মামুদপুর দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি৷
এই ঘটনা মামুদপুর ইউনিয়নে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি- দলীয়ভাবে তদন্ত না হলে এলাকাবাসী গণআন্দোলনের ডাক দেবে।