এস. এল. টি. তুহিন, বরিশাল :: বরিশাল বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি ফিরিয়েছেন অভিজ্ঞ, ত্যাগী ও গঠনমূলক নেতৃত্বের প্রতীক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন। দীর্ঘ প্রবাস জীবন ও চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে তিনি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছেন। তার প্রত্যাবর্তন বরিশাল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দলীয় কোন্দল ও নেতৃত্ব সংকটের সময়ে তার উপস্থিতি নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলেছে।

অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন ২০০৩-২০০৯ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯-২০১১ সাল পর্যন্ত বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দক্ষ নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে তিনি বরিশাল বিএনপির অন্যতম জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন।
বর্তমানে তিনি বরিশাল বিএনপিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। তার নেতৃত্বে দলীয় কর্মসূচিতে ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে, যা সংগঠনের নতুন প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করছে। দেশে ফেরার পর থেকেই তিনি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করছেন। সম্প্রতি বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
গত ২২ মার্চ রাত ৯টায় নগরীর স্ব-রোডের বাসভবনে আয়োজিত এই বৈঠকে সাংগঠনিক কার্যক্রম, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় রাজন নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমি আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো।
গত ১৬ মার্চ, বরিশাল জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) পকেট কমিটি গঠনের প্রতিবাদে নজরুল ইসলাম খান রাজনের নেতৃত্বে একাংশ নেতাকর্মী নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বরিশাল ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় বিএনপির বিভাগীয় মতবিনিময় সভা চলছিল, যেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগীয় টিম প্রধান আবদুল আউয়াল মিন্টু। বিক্ষোভকারীরা তার কাছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কমিটি গঠনের দাবি জানান।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের কাছে রাজন বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নেতৃত্ব গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন হয়ে আসছে। কিন্তু কিছু নেতা এখন দলীয় গণতন্ত্র ব্যাহত করতে চাচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। অনিয়ম হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রাজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এই আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সাংসদ আবুল হোসেন খানও মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন। তবে রাজনের সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা তাকে তৃণমূলের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে, যা তাকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রাখছে।
২০১১ সালের ১১ মে, ভোলায় বিএনপির সমাবেশ শেষে বরিশাল ফেরার পথে চরকাউয়া ফেরিতে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন নজরুল ইসলাম খান রাজন।হামলাকারীরা তার চোখ উৎপাটনের চেষ্টা করে, তবে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
দীর্ঘ ১২ বছর পর, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশে মিছিল নিয়ে অংশ নেন। এরপর ১৮ ডিসেম্বর বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের টুমচর গ্রামে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবর জিয়ারত করেন।
বর্তমানে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজনের নেতৃত্বে বরিশাল বিএনপি একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে কাজ করছে। তিনি দলের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতাকর্মীদের একত্রিত করে সংগঠনকে আরও সুসংহত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তার ফিরে আসা বরিশাল বিএনপির জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।