চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল নেতা শাওন কাবী। তার অভিযোগ, গত ১১ মার্চ (মঙ্গলবার) রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ফরিদগঞ্জ থানার একটি কক্ষে আটকে রেখে পুলিশের একাধিক সদস্য তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
ঘটনার সূত্রপাত

ওই রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকা থেকে ছাত্রদল নেতা শাওন কাবীকে আটক করেন ফরিদগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খোকন চন্দ্র দাশ। অভিযোগ ছিল, শাওন কাবী ও তার সঙ্গীরা এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং তার গাড়ির চালককে মারধর করেছিলেন। তবে পুলিশ যখন তাকে আটক করতে যায়, তখন পুলিশের সঙ্গেও তার বাদানুবাদ হয়।
শাওন কাবীর অভিযোগ
শাওন কাবীর দাবি, আটক করার পর উপপরিদর্শক খোকন চন্দ্র দাশসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে থানায় নিয়ে যান এবং সেখানে ভয়াবহ নির্যাতন চালান। তিনি জানান,
“বল পুলিশ আমার বাপ।”—এই কথা বলতে বাধ্য করা হয় তাকে। এরপর তার মুখে জোরপূর্বক একটি গোটা আলু ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং একাধিক পুলিশ সদস্য একসঙ্গে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরে আসার পর আবারও মারধর করা হয়।
এই নির্যাতনের ফলে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ—বিশেষ করে পা, উরু, হাতের আঙুল ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত লাগে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাওন কাবী
নির্যাতনের পর গুরুতর আহত অবস্থায় শাওন কাবীকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জামিন পেলেন শাওন কাবী
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় তিনি জামিন পান। তবে তিনি এখনো শারীরিকভাবে সুস্থ নন এবং নির্যাতনের বিচার দাবি করছেন।
ওসির বক্তব্য
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম জানিয়েছেন, তিনি উপপরিদর্শক খোকন চন্দ্র দাশকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, আটক ব্যক্তিকে কোনোভাবেই মারধর করা যাবে না। তবে এরপরও কেন এই নির্যাতন করা হলো, তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপারের প্রতিক্রিয়া
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেছেন,
“সত্যিই যদি নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপপরিদর্শক খোকন চন্দ্র দাশের বক্তব্য মেলেনি
অভিযুক্ত উপপরিদর্শক খোকন চন্দ্র দাশের কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
Overall analysis
এই ঘটনা বাংলাদেশে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে। আইন অনুযায়ী, পুলিশ কোনো আটক ব্যক্তিকে নির্যাতন করতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—শাওন কাবীর অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হবে কি না, এবং সত্যিই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না। জনগণের প্রত্যাশা, এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।