Satyajit Das (Moulvibazar Correspondent):
বাংলাদেশের চা শিল্পে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে শুরু হয়েছে নতুন চা পাতার কুঁড়ি উত্তোলন,যা শ্রমিকদের মুখে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। দীর্ঘ তিন মাসের ব্যবধানে বন্ধ থাকা চা বাগানগুলোতে এখন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
দেশের অন্যতম প্রধান চা উৎপাদন অঞ্চল বড়লেখার নিউ সমনবাগ ও পাথারিয়া চা বাগানে আনুষ্ঠানিকভাবে কুঁড়ি উত্তোলনের কাজ শুরু হয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে। শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী রীতিতে নতুন মৌসুমের সূচনা করা হয়,যা তাদের কর্মজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রতি বছর শীত মৌসুম শেষে চা গাছে প্রুণিং (Pruning) বা ছাঁটাই করা হয়,যা গাছকে পুনরায় সতেজ করে তোলে। এতে গাছ নতুন কুঁড়ি গজানোর প্রস্তুতি নেয় এবং বাগানগুলোর স্বাভাবিক উৎপাদন চক্র বজায় থাকে।
এ বছর আগাম বৃষ্টির ফলে গাছে দ্রুত সতেজ সবুজ কুঁড়ি গজিয়েছে, যা চা শিল্পের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শাহিদ নেওয়াজ বলেন,
“মৌসুমের শুরুতেই অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চা উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা করছি। এবার আগেভাগেই চা উত্তোলন শুরু হয়েছে, যা সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।”*
চা শ্রমিকদের কাছে নতুন কুঁড়ি উত্তোলন শুধু কাজ নয়, এটি তাদের জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক আনন্দঘন মুহূর্ত। শ্রমিকদের ঐতিহ্য অনুসারে, নতুন চায়ের কুঁড়ি তোলার আগে বাগানে বিশেষ পূজা, আরতি ও মোনাজাত করা হয়,যাতে চা উৎপাদন শুভ হয় এবং তাদের আয় বৃদ্ধি পায়।
পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কন্দ মুন্ডা,সাধারণ সম্পাদক কালি প্রসাদ ভর এবং শ্রমিক সর্দার কাজল সাঁওতাল,রাজেশ কালোয়ার সহ অনেকে এ আয়োজনের অংশ নেন।
শ্রমিক শ্যামল বাক্তি বলেন:”নতুন চা কুঁড়ি তোলার সময়টা আমাদের জন্য উৎসবের মতো। চায়ের মৌসুম শুরু হওয়ায় আমাদের আয়ের পথ খুলেছে, যা পরিবার চালানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
চা উৎপাদনে আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবছর মার্চ-এপ্রিলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় চা গাছে কুঁড়ি দ্রুত গজিয়েছে। এর ফলে চা পাতার গুণগত মান উন্নত হবে এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক বিশেষজ্ঞ জানান;
“প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকলে এবং সময়মতো বৃষ্টি হলে চায়ের স্বাদ ও গুণগত মান আরও ভালো হয়,যা আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের চায়ের চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করবে।”
বাংলাদেশের চায়ের বিশ্ববাজারে চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। উচ্চমানের চা উৎপাদনে গুণগত মান বজায় রাখা ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা জরুরি। বড়লেখার চা বাগানগুলোর এ বছর আগাম উৎপাদন ও নতুন কুঁড়ির উত্তোলন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে।
চা শিল্পের অগ্রগতিতে নতুন মৌসুমের সম্ভাবনাঃ-
উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা,চা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি,রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালীকরণ,উন্নতমানের চায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে,’বাংলাদেশের চা শিল্পে নতুন কুঁড়ি উত্তোলনের এই ধারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কৃষি ও রপ্তানি খাতের সমৃদ্ধিতে এটি বড় ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে’।
বড়লেখার চা শিল্প নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে, যা দেশের অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে।