চীনের তিয়ানজিন শহরে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ অব্যবহৃত আকাশচুম্বী ভবন গোল্ডিন ফিনান্স ১১৭-এর নির্মাণ কাজ এক দশক পর আবারও শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। ২০০৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া এবং ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছানো ভবনটি ৫৯৭ মিটার (১,৯৫৯ ফুট) উঁচু এবং ১১৭ তলা বিশিষ্ট। এটি চীনের সবচেয়ে উঁচু স্কাইস্ক্র্যাপার হওয়ার কথা ছিল।
ভবনটিতে ব্যবহৃত হয়েছিল বিশেষ “মেগা কলাম” কাঠামো, যা ভূমিকম্প ও প্রবল বাতাসের প্রতিরোধে সহায়ক। পাশাপাশি, ভবনের ওপরের অংশে হীরার আকৃতির একটি আট্রিয়াম তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে সুইমিং পুল ও পর্যবেক্ষণ ডেক থাকার কথা ছিল। ভবনটিতে অফিস এবং বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান P&T Group।
তবে ২০১৫ সালের চীনা শেয়ারবাজার বিপর্যয়ের পর, ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন গোল্ডিন প্রপার্টিজ হোল্ডিংসের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এবং কোম্পানিটি পরে দেউলিয়া হয়ে যায়। নতুন একটি নির্মাণ পারমিট ইঙ্গিত দেয় যে ভবনটির আগের মালিকের নাম এখন আর প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত নেই। ভবিষ্যতে ভবনটির ব্যবহারিক পরিকল্পনাও পরিবর্তিত হতে পারে।
চীনা সরকারের তরফ থেকে সামগ্রিক রিয়েল এস্টেট বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য স্থানীয় সরকারগুলিকে সহায়তা করার আহ্বানের অংশ হিসেবে এই প্রকল্পগুলোর কাজ আবার শুরু হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও স্কাইস্ক্র্যাপার নির্মাণ ব্যয়বহুল এবং কখনো কখনো আর্থিকভাবে লাভজনক না হলেও, এগুলো একটি শহরের ভাবমূর্তি ও বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গোল্ডিন ফিনান্স ১১৭ প্রকল্পের সাথে একটি বৃহত্তর উন্নয়ন পরিকল্পনাও ছিল, যেখানে আবাসিক ভিলা, অফিস ভবন, বাণিজ্যিক এলাকা ও বিনোদন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে চীনের বর্তমান দুর্বল সম্পত্তি বিক্রয় ও অফিস ভাড়ার হার বিবেচনা করলে বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের আর্থিক সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তিয়ানজিন ইতোমধ্যে আরেকটি সুপারটাল বিল্ডিং — তিয়ানজিন সিটিএফ ফিনান্স সেন্টার (৫৩০ মিটার) — সম্পন্ন করেছে, যা বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম ভবন। এখন যদি গোল্ডিন ফিনান্স ১১৭ সম্পন্ন হয়, তবে এটি চীনের তৃতীয় এবং বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ভবন হবে। তবে সৌদি আরবের জেদ্দা টাওয়ার ও দুবাইয়ের বুর্জ আজিজি প্রকল্প শেষ হলে ভবনটি বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে আরও নিচে নেমে যেতে পারে।
সারাংশে, চীনে সুপারটাল বিল্ডিং নির্মাণ পুনরায় শুরু হওয়া কেবল অবকাঠামোগত অগ্রগতির প্রতীক নয়, বরং সরকারের বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্পগুলো আর আগের মতো “ভ্যানিটি প্রজেক্ট” বা অহমিকা প্রদর্শনের অংশ নয়, বরং নির্ধারিত ও পরিকল্পিত উন্নয়নের অংশ।