কুয়েতে নাগরিকত্ব বাতিলের এই ঢেউকে বিশ্লেষকরা দেশটির নতুন আমির শেখ মিশাল আল-আহমদ আল-সাবাহ’র সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেখছেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতায় এসে তিনি সংসদ বাতিলসহ সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করেন। এখন নতুন করে ‘জাতীয় পরিচয় পুনর্গঠন’-এর উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ২৬ হাজারই নারী। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সাম্প্রতিক পদক্ষেপে বিয়ের মাধ্যমে পাওয়া নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, যা প্রধানত নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ১৯৮৭ সালের পর থেকে যেসব নারী বিয়ের ভিত্তিতে কুয়েতি নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তার মধ্যে ৩৮ হাজার ৫০৫ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়াও জাল কাগজপত্র কিংবা দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে অনেকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। এমনকি কুয়েতি পপ তারকা নাওয়াল ও অভিনেতা দাউদ হুসেইনের মতো পরিচিত ব্যক্তিরাও বাদ পড়েছেন।
জর্দান বংশোদ্ভূত এক নারী বলেন, “২০ বছরের বেশি সময় কুয়েতে আইন মেনে থাকার পর একদিন জানতে পারলাম আমি আর কুয়েতি নই। এটা এক ভয়াবহ ধাক্কা।”
লামা নামের এক নারী বলেন, “ওরা মায়েদের টার্গেট করেছে— যারা এই দেশের সন্তানদের জন্ম দিয়েছে ও লালন-পালন করেছে।”
গবেষক মেলিসা ল্যাংওয়ার্থি মনে করেন, “এই পদক্ষেপ আসলে এক ধরনের বার্তা— এসব নারী কুয়েতি সমাজের ‘আদর্শ নাগরিক’ নয়।”
শুরুতে এই উদ্যোগকে নাগরিকত্বের অপব্যবহার ঠেকানোর প্রয়াস হিসেবে দেখা হলেও, সময়ের সঙ্গে জনমত পাল্টে যেতে থাকে। এক কুয়েতি নাগরিক জানান, তার স্ত্রী নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। অথচ তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। এখন তার পেনশন বন্ধ, ব্যাংক ঋণও আটকে গেছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নাগরিকত্ব বাতিল হলেও সামাজিক সুবিধা পাবেন এই নারীরা। তবে রাজনৈতিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত থাকবেন।
বিশ্লেষক জর্জিও কাফিয়েরো মনে করেন, “এটা কেবল সংস্কার নয়, বরং একটি রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। ভোটার সংখ্যা কমিয়ে সরকার এমন একটি গোষ্ঠী তৈরি করতে চায়, যাকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”
উল্লেখ্য, কুয়েতের জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ হলেও প্রকৃত কুয়েতি নাগরিক এক-তৃতীয়াংশের কম। বহু বছর ধরে ‘বিদুন’ নামে একটি রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীও দেশটিতে বসবাস করছে, যাদের স্বাধীনতার পর নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, নাগরিকত্বের অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার। রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়লে একজন মানুষের জীবন সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে। কুয়েতে যা এখন চোখের সামনে ঘটছে।