Joypurhat Correspondent :
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার প্রদত্ত ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল বিতরণে ওজন ঘাটতি, স্বজনপ্রীতি এবং কার্ড বাণিজ্যের মতো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ওজন ঘাটতির অভিযোগ
সূত্র জানায়, পাকিস্তান থেকে এলসি করে আমদানি করা ১,৫০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করা হয় ঠিকাদারির মাধ্যমে ক্ষেতলাল খাদ্য গুদামে। ২৭ মে মামুদপুর ইউনিয়নের জন্য প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন মন্ডলের স্বাক্ষরিত ডিও’র মাধ্যমে ৫০ কেজি ওজনের ৩০২ বস্তা চাল উত্তোলন করা হয়। তবে ২৮ মে বিতরণের সময় উপস্থিত ট্যাগ অফিসারের সামনে কয়েকটি বস্তার ওজন করলে দেখা যায়, প্রতিটি বস্তায় ৭–১০ কেজি পর্যন্ত চাল কম রয়েছে।
ঘটনার পর বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তিনি তদন্ত করে সত্যতা মিললে বিতরণ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।
স্বজনপ্রীতি ও কার্ড বাণিজ্য
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এক পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ভিজিএফ কার্ড ইস্যু করেছেন, এমনকি শিশুদের নামেও কার্ড দেওয়া হয়েছে। অনেকে একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি কার্ডে ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত চাল কম দেওয়া হয়।
চাল ব্যবসায়ী সাইফুর রহমানের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের যোগসাজশে কার্ড কেনাবেচার অভিযোগও রয়েছে। শিশুদের দিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে চাল উত্তোলনের পর সেসব চাল বস্তাবন্দি করে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
কর্তৃপক্ষের অবস্থান
প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন মন্ডল বলেন, “আমার দায়িত্ব শুধু কার্ড যাচাই করা। চাল ও ওজন যাচাই ও বিতরণ প্রশাসনের বিষয়।”
ক্ষেতলাল উপজেলা ফুড অফিসার হুমায়ুন আহমেদ বলেন, “চালগুলো ঠিকাদার দিয়ে গুদামে এসেছে। স্কেল না থাকায় ইনভয়েস অনুযায়ী ওজন ধরে ডিও ইস্যু করা হয়েছে।”
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘স্মৃতি কনস্ট্রাকশন’-এর মালিক মাহবুবর আলম দাবি করেন, “আমরা ঠিকঠাক ওজনে চাল বুঝিয়ে দিয়েছি, বিতরণের ঘাটতির দায় আমাদের নয়।” একই বক্তব্য দিয়েছেন আরেক ঠিকাদার আব্দুল মালেক।
Administration response
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম, অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনিক আলোচনা হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আল জিনাত জানান, “তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এই অনিয়মে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
উল্লেখ্য, উপজেলা ফুড অফিসার হুমায়ুন আহমেদের বিরুদ্ধে পূর্বেও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ‘আয়নাঘর’ প্রকল্পে অনিয়ম অন্যতম। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে।