পীরগাছা (রংপুর):
পীরগাছা উপজেলার শল্লার বিল আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোটি টাকার দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় বাস্তবায়িত এ প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বরাদ্দের অপব্যবহার, ঘর নির্মাণে নিম্নমান, এবং ভূমিহীনদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে দুদকের রংপুর কার্যালয়ের একটি দল শল্লার বিল এলাকায় সরেজমিন তদন্ত চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন। সঙ্গে ছিলেন উপ-সহকারী পরিচালক জয়ন্ত সাহা ও কোর্ট পরিদর্শক মো. হোসেন আলী।
তদন্ত চলাকালে স্থানীয়দের মুখে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রকৃত ভূমিহীনদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিত্তবানদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর পেতে অনেকে ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৪৩০টি ঘর নির্মাণের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। কিন্তু ঘর নির্মাণে মানহীন সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিঘর থেকে গড়ে ১ লাখ টাকা করে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া মাটি ভরাটের জন্য কাবিখা প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ৫৬৬ টন গমের পরিবর্তে শ্রমিক নিয়োগ না করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা হয়, যা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী। ফলে বর্ষা মৌসুমে ঘরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেজার দিয়ে অতিরিক্ত মাটি তুলে তা বাইরে বিক্রি করে আরও কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সদ্য বিদায়ী ইউএনও নাজমুল হক সুমন ও স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
এছাড়া পুনর্বাসনকৃত পরিবারগুলোর জন্য নেই প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা — নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কবরস্থান। অধিকাংশ পরিবার ১০টি পরিবারে ভাগ করে একটি নলকূপ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত এখনও চলমান, এবং প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তারা।