২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সংঘটিত ভয়াবহ বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট। ২০২৫ সালের ৮ মে এই রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর আগে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষে আদালত রায় অপেক্ষমাণ রেখেছিল।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলার শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী। আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সরওয়ার আহমেদ ও শিশির মনির।
ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) এই হামলার পেছনে দায়ী। প্রাণ হারান ১০ জন, আহত হন বহু মানুষ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর সিআইডি ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি পৃথক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে।
২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন: মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা তাজউদ্দিন (সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই), মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান এবং মাওলানা আরিফ হাসান সুমন। এদের মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের অন্য একটি মামলায় ইতিমধ্যেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন: হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
মামলাটির আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয় ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চে। তবে নানা কারণে শুনানি দীর্ঘায়িত হয় এবং পরবর্তীতে মামলাটি অন্য হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে অবশেষে এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত হলো।
রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলা ছিল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। এ রায়ের মাধ্যমে সেই ভয়াবহ ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছে দেশের উচ্চ আদালত।