বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার বিনিয়োগের নতুন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-চীন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আজ একটি যুগান্তকারী যাত্রা শুরু করছি। বাংলাদেশে এখন টেক্সটাইল, ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট, তথ্যপ্রযুক্তি ও মৎস্যসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনা বিনিয়োগকারীদের আমি আহ্বান জানাই—এসে বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করুন।”
সম্মেলনটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত হয়, যেখানে অংশ নিয়েছে চীনের শতাধিক কোম্পানির প্রায় আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। অনুষ্ঠানে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও ও ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এক বড় পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যেই নীতিমালা সহজীকরণ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে একাধিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এর লক্ষ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং অর্থনীতিকে গতি দেওয়া।” তিনি উল্লেখ করেন, “যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এক সময় গরু চরানোর মাঠে পরিণত হয়েছিল, এখন সেগুলোকে আমরা আধুনিক ও কার্যকর শিল্পাঞ্চলে রূপান্তরের পথে এগোচ্ছি।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রভাবের প্রশংসা করে ইউনূস বলেন, “আপনাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আমি কয়েক মাস আগে বেইজিং সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য। তিনি প্রতিশ্রুতি রেখেছেন, এবং আমি আশা করি, এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গেম চেঞ্জার ভূমিকা পালন করবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৬ বছরের নিচে। এই বিশাল কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের দেশকে একটি উৎপাদন ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু অতীতে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্র সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করেছে। তবে লাখো তরুণের অংশগ্রহণে সংঘটিত জুলাই বিপ্লব সে অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছে।”
ড. ইউনূস বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাট ও ঢাকাই মসলিন শিল্পের প্রসঙ্গে বলেন, “পাট শুধু বস্তার তন্তু নয়, এটি পরিবেশবান্ধব একটি অসাধারণ সম্পদ, যার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে নতুন করে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব।” তিনি পাট এবং জামদানি ও মসলিনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দেন।
সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, “এটি শুধু একটি বিনিয়োগ সম্মেলন নয়, এটি আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বের ৫০ বছরের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। চীনা বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি আমাদের সম্পর্কের দৃঢ়তা ও ভবিষ্যতের সম্মিলিত সমৃদ্ধির প্রতিচ্ছবি।”
বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরির অংশ হিসেবে তিনি জানান, বিডা-তে এখন বেসরকারি খাত থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘রিলেশনশিপ ম্যানেজার’ ব্যবস্থা, এবং মাসিক প্রাতরাশ বৈঠকের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন এক নবযাত্রার সূচনায় দাঁড়িয়ে, আর এই যাত্রায় চীন গুরুত্বপূর্ণ এক অংশীদার হতে পারে — এমন বার্তাই যেন পুরো সম্মেলনের মূলে ছিল।
Trending
- পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে কাপ্তাইয়ের ৫ শতাধিক পরিবার, আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের
- শার্শায় বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
- টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি, কর্ণফুলী বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে
- সৈয়দপুরে সেনাবাহিনীর অভিযানে ৮৮৫ পিস ইয়াবা-টাপেন্টাডলসহ নারী আটক
- পীরগাছায় ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলায় জমে উঠেছে কোরবানির হাট
- ঝিনাইগাতীতে কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পে লাখ লাখ টাকার অনিয়মের অভিযোগ, তদন্তে নেমেছে প্রশাসন
- দত্তগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ হস্তান্তর
- কিশোরগঞ্জে শহীদ জিয়ার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে যুবদলের দোয়া ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
চীনা উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব গড়ার আহ্বান : ড. মুহাম্মদ ইউনূস
Keep Reading
Add A Comment
Update subscription
Get the latest and updates from Bangla FM straight to your inbox
Publisher: Anwar Murad
Editor: Mo Rashidul Islam (Rashed Manik)
Office- House-164/1, Road-3, Muhammadia Housing Limited, Muhammadpur, Dhaka.Mobile-01915-098961 Email: bangla.fm2020@gmail.com
© 2025 BanglaFM. All Rights Reserved.