ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা ও আয়কর বিবরণীতে বড় ধরনের গরমিলের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও দুদক উভয়ই নিজ নিজ পর্যায়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় যে সম্পদের বিবরণ দেন, তা আমাদের যাচাইয়ে ভিন্নচিত্র ধরা পড়ে। এই অসংগতি দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।”
দুদক চেয়ারম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা হলফনামায় নিজের নামে ৬.৫০ একর কৃষিজমি দেখান এবং তার মূল্য উল্লেখ করেন ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অথচ দুদকে দাখিল করা বিবরণীতে এবং বিভিন্ন নথিপত্র যাচাইয়ে জানা গেছে, তার মালিকানায় রয়েছে ২৮.৪১১ একর কৃষিজমি। এসব জমির মধ্যে ক্রয়কৃত অংশের মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। অর্থাৎ ২১.৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন তিনি এবং জমির প্রকৃত মূল্য থেকেও প্রায় ৩২ লাখ টাকা কম দেখিয়েছেন।
এ ছাড়া, দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে শেখ হাসিনা আমদানি করেন একটি বিলাসবহুল মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। গাড়িটির মূল্য ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো, যা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এই গাড়িটি তিনি নিজের ধানমন্ডির ঠিকানা ব্যবহার করে আমদানি করেন এবং নিজেই ব্যবহার করেন। অথচ, কোটা ব্যবহারকারী সংসদ সদস্যের আয়কর নথি কিংবা হলফনামায় গাড়িটির কোনো উল্লেখ নেই।
এই অসামঞ্জস্যের ভিত্তিতে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে দুদক। পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পৃথকভাবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানও শুরু করেছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়া, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ছয়টি পৃথক মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলায় আদালত ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
তদন্ত প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “রাজনৈতিক বিষয় নয়, আমরা কেবল হিসাব মিলিয়েছি। নির্বাচন কমিশনে এক রকম হিসাব, দুদকে আরেক রকম—এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হননি, এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের তদন্তও চলমান রয়েছে।
এই অনুসন্ধান কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত একটি তদন্ত দল।