বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গণের অন্যতম পথিকৃৎ, সঙ্গীতজ্ঞ ও ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্জীদা খাতুন মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার পুত্রবধূ ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ছায়ানটের ফেসবুক পেজ থেকে একটি বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। শোকবার্তায় বলা হয়েছে, “সংস্কৃতিকর্মী, শিল্পী, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন-এর প্রয়াণে ছায়ানট গভীর শোক জ্ঞাপন করছে।”
সন্জীদা খাতুনের জীবন ও কর্ম
১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল জন্ম নেওয়া সন্জীদা খাতুনের বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক, এবং মা সাজেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়েই তার কর্মজীবন শুরু, এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন।
সন্জীদা খাতুন শিক্ষাজীবন থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি আবৃত্তি, অভিনয় ও গানের চর্চা করেছেন এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ছিলেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
তার কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে—
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)।
এ ছাড়া ১৯৮৮ সালে কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তার লেখা ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত করে।
সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালো। তার অবদান ও স্মৃতি চিরদিন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হয়ে থাকবে।