দেশের ওষুধশিল্পে আমদানিনির্ভরতা কমাতে এবার স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন দেশেই কাঁচামাল উৎপাদনের ওপর জোর দিচ্ছে। ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে এবং শিল্পকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কমিশন কাঁচামাল উৎপাদনে জাতীয় নীতির আওতায় প্রণোদনা ও সহায়তার সুপারিশ করতে যাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালে বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএআইএমএ)-এর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই বিষয়গুলো উঠে আসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যবহৃত ওষুধের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ এই কাঁচামাল উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু আমরা যদি দেশেই এই কাঁচামাল তৈরি করতে পারি, তাহলে শুধু স্বনির্ভরতাই নয়, রপ্তানির দিক থেকেও বড় সুযোগ তৈরি হবে।” তিনি জানান, কমিশন এবিষয়ে সুপারিশমালা প্রস্তুত করছে, যাতে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল উৎপাদনকে উৎসাহিত করা যায়।
বৈঠকে বিএআইএমএ সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান বলেন, ভারত, চীন ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে ওষুধের কাঁচামাল শিল্পে উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়ীদের নানামুখী প্রণোদনা দিয়েছে। তারা নমুনা পরীক্ষা ও অনুমোদন প্রক্রিয়াও সহজ করেছে। আমাদের দেশেও এই ধরনের নীতি সহায়তা জরুরি।
বিএআইএমএ’র পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে ৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
- কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া।
- যেসব প্রতিষ্ঠান ১২০% উৎপাদন সক্ষমতা রাখে, তাদের জন্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা।
- নিবন্ধন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করা।
- স্থায়ীভাবে কাঁচামাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড় সুবিধা নিশ্চিত করা।
- ওষুধ প্রশাসনের ব্লক লিস্ট কমিটিতে বিএআইএমএ’র প্রতিনিধি রাখার দাবি।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের এম জামাল উদ্দিন, সোডিক্যাল মেডিকেল ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নিপ কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, ওয়ার্ল্ড এপিআই কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্ল্যান্ট ডিরেক্টর জাকির হোসেন, এবং ডায়াবেটিকস সাইন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ মাহমুদ।
ওষুধশিল্পে দেশীয় কাঁচামাল উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে, দেশে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস ও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি—এই তিনটি ক্ষেত্রেই একযোগে উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।