বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়ে প্রতীকী চেহারায় রূপ নেওয়া আবু সাইদের মৃত্যু নিয়ে এবার সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানালেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক ভিডিও বার্তায় তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সাইদের হত্যার জন্য তার সরকার বা পুলিশ দায়ী নয়, বরং এটি ছিল একটি ‘ষড়যন্ত্র’। এ ঘটনার পেছনে সরাসরি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করেন তিনি।
বাংলা নববর্ষের ঠিক আগের রাতে, রবিবার আট মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “পুলিশ আবু সাইদকে ধাতব গুলি ছোড়ে নি। তাদের কাছে ছিল রাবার বুলেট, যা আত্মরক্ষার্থে ছোড়া হয়েছিল। আসলে সাইদের মৃত্যু হয় পাথরের আঘাতে। তখন তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছিল।”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আরও দাবি করেন, পুলিশ কখনও ৭.৬২ এমএম ধাতব গুলি ব্যবহার করেনি। তাহলে সেই বুলেট এল কোথা থেকে? হাসিনার প্রশ্ন, “মিছিলে বন্দুক নিয়ে এসেছিল কে? তদন্তের চেষ্টা করতেই এক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেন ইউনূস। কারণ, তিনি জানেন এই খুনের পেছনে তারই হাত রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বা আমার দল এই হত্যার সঙ্গে জড়িত নই। বরং পুলিশ নিজেরাই হামলার শিকার হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড ছিল নিখুঁত ষড়যন্ত্রের অংশ।”
এছাড়াও শেখ হাসিনা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তোলেন—আবু সাইদের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনরায় ফরেন্সিক পরীক্ষা করাতে হবে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এটি প্রমাণ করতেই হবে যে এটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং ইউনূসই এর মূল কুশীলব।
এই ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনা শুধু সাইদের মৃত্যু নিয়েই নয়, আরও বড় পরিসরে অভিযোগ তোলেন ইউনূসের বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেন, “বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইউনূস বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে মুছে দিতে চাইছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে। আমি সব জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করেছি, সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জবাব ইউনূস দিতে পারবেন কি?”
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশকে ধ্বংস করতে বিদেশ থেকে অর্থ আনছেন ইউনূস। তিনি আত্মকেন্দ্রিক, ক্ষমতালোভী এবং বিদেশি চক্রান্তে লিপ্ত একজন ব্যক্তি।”
গত অগস্টে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। দিন কয়েক আগেই তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশে ফেরার জন্য। আর এবারের নববর্ষের প্রাক্কালে আবারও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন—তিনি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
এছাড়াও, আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়েও সরব হন হাসিনা। তিনি জানান, দলের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা, এমনকি হোটেল ও হাসপাতাল পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
সবশেষে, শেখ হাসিনা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আগুন নিয়ে খেললে নিজেও পুড়ে মরতে হবে।”