মাগুরার আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দ্রুত রায় প্রদান করায় বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি এটিকে বিচার বিভাগের একটি বড় সাফল্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বিচার শেষে যার যে শাস্তি প্রাপ্য, সেটিই হওয়া উচিত। আবেগ দিয়ে বিচার পরিচালনা করা যায় না। দ্রুত বিচার মানুষের মৌলিক অধিকার। দীর্ঘসূত্রতা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তিনি বলেন, “চাঞ্চল্যকর অন্যান্য মামলাতেও সাক্ষ্য সংগ্রহের সুবিধা থাকলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গণহারে সাজা দেওয়া নয়, প্রকৃত দোষীর শাস্তি এবং নিরপরাধ ব্যক্তির খালাসই প্রকৃত ন্যায়বিচার।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এই মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনের খালাস ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিকেই ইঙ্গিত দেয়। তবে দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যেন নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন, সেটাও নিশ্চিত করা জরুরি।”
আজ সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অপর তিনজন—শিশুটির বোনের স্বামী, ভাশুর ও শাশুড়ি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি এহসানুল হক সমাজী বলেন, “১৬৪ ধারার জবানবন্দি, মেডিকেল প্রতিবেদন এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রধান আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।”
মামলার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, চলতি বছরের ৬ মার্চ শিশুটি বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। ৭ মার্চ সকালে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
৮ মার্চ শিশুটির মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ১৩ এপ্রিল অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ১৭ এপ্রিল মামলাটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর, ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ এবং ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
২৭ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণ ও ১৩ মে যুক্তিতর্ক শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। অপর আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি।
এই রায় স্বল্প সময়ে বিচার নিষ্পত্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।