ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৫: ১৬ বছর আগে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের ভয়াবহতম ট্র্যাজেডি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে গঠিত তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, তদন্ত এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী জুনের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বুধবার বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তদন্ত কমিশনের সদস্যরা। সেখানে তারা এ পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং সরকারের সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করেন।
কমিশন প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আলম ফজলুর রহমান বলেন, “ঘটনার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও তদন্তে গতি এসেছে। আমরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। অভিযুক্তদের অনেকে বিদেশে অবস্থান করছেন, তাদের খুঁজে বের করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, “কারাগারে থাকা কয়েকজনের সাক্ষাৎকার ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। বিদেশে থাকা ২৩ জনের মধ্যে ৮ জন সাক্ষাৎকার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।”
ঘটনার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমরা তদন্তে দেখছি—ডিজি হত্যার পর একে একে অন্যান্য কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। এটি একটি ঠাণ্ডা মাথার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল, যা পূর্বনির্ধারিত না হলে সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “ঘটনার ধরন অনেকটা পলাশীর ষড়যন্ত্রের মতো—ভিতরের কেউ না থাকলে এমন হত্যাযজ্ঞ সম্ভব নয়। আমাদের অবশ্যই এর শিকড় খুঁজে বের করতে হবে।”
কমিশনের আরেক সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, “এত বড় হত্যাকাণ্ডের পরও একটি দপ্তর থেকে কাউকে সরানো হয়নি, কেউ দায় স্বীকার করেনি। এটি আমাদের গোয়েন্দা, সামরিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোর একটি বড় ব্যর্থতা।”
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, “এটি ছিল এক নির্মম হত্যাকাণ্ড, যেখানে সেনাবাহিনীর নিজের অফিসারদেরই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুরো জাতি এখন জানতে চায়—কারা এর পেছনে ছিল, কাদের ব্যর্থতায় এমন ঘটনা ঘটল।”
তিনি আরও বলেন, “কমিশনের ওপর জাতি এখন আস্থা রেখেছে। এই ভয়ংকর ঘটনার সত্য উদঘাটন করতেই হবে। সরকার কমিশনের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।”
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান, মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, ড. এম আকবর আলী, মো. শরীফুল ইসলাম, শাহনেওয়াজ খান চন্দন এবং এ টি কে এম ইকবাল।