Mr. Mizanur Rahman Badal, Manikganj:
সংবাদ প্রকাশের পর জেলা পুলিশ সুপার মোসা. ইয়াসমিন খাতুন মঙ্গলবার বিকেলে স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সিংগাইর থানার সেই বিতর্কিত ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরকে ক্লোজের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারী “বাংলাএফএম” অনলাইনে সংবাদ প্রচার হয়। এরপর থেকে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যায়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানায় ওসি হিসেবে ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। এরপর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। আওয়ামী লীগের উপজেলার নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেলেও কিছু নেতা-কর্মীরা এলাকায় অবস্থান করেন। থানা-পুলিশ গ্রেফতার বানিজ্যে নেমে পড়েন। থানায় রেকর্ড হওয়া একাধিক মামলাকে পুঁজি করে পুলিশ হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে সিংগাইর থানায় একটি হত্যা মামলাসহ ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। এতে স্থানীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ২২৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক হাজারের উপরে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। গত ৫ আগস্ট বিকেলে ধল্লা পুলিশ ক্যাম্প ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়। এছাড়া বাকি মামলার ঘটনাগুলো আওয়ামী শাসন আমলের হলেও নথিভুক্ত হয় অভ্যুত্থান পরবর্তী। তার মধ্যে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গোবিন্দলে সংঘটিত ফোর মার্ডার মামলাটি চাঞ্চল্যকর। এরপর জুলাই বিপ্লবের পর শুরু হয় “ডেভিল হান্ট” অভিযানে পুলিশ ৫৮ জনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই এজাহারের বাইরের। মামলায় অজ্ঞাত আসামী হিসেবে আটক করা হয় তাদেরকে। এজাহারে নাম না থাকলেও আটকের পর শুধু আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থক হওয়ায় পুলিশ তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন।
আসামীদের হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় নগদ টাকা। পুলিশের চাহিদা মতো টাকা দিলেই ফাঁড়ি ভাঙ্চুর কিংবা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। না দিলে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। কঠোর ভাষা ব্যবহার করে কোর্টে আবেদন করা হয় রিমান্ডের।
ভুক্তভোগী একাধিক পরিবারের সঙ্গে কথা বললে বেরিয়ে আসে পুলিশের গ্রেফতার ও জমজমাট অর্থ বানিজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভুক্তভোগীরা হলেন, উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের সানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, চর লক্ষ্মীপুর পোকা সাঈদের ১ লাখ ১০ হাজার, আজিমপুর গ্রামের শাহজাহান মীরের ১ লাখ, নয়াডাঙ্গী গ্রামের আতাউর কন্ট্রাক্টরের ১ লাখ, পূর্ব বান্দাইল গ্রামের ফরমান আলী খানের কাছ থেকে ১ লাখ, জামির্ত্তা রামকান্তপুর গ্রামের আব্দুস ছামাদের কাছ থেকে ৭০ হাজার, কিটিংচরের জসিম উদ্দিন পাখির কাছ থেকে ৬০ হাজার, কাংশার গ্রামের ইসমাইলের কাছ থেকে ৫০ হাজার, আজিমপুর গোলাম রসুলের ৫০ হাজার, গোলাইডাঙ্গা-বাস্তার ডা. তারেকের ৫০ হাজার, দক্ষিণ জামশার সিদ্দিক মোল্লার ৫০ হাজার, তালেবপুর হুমায়ুন মেম্বারের কাছ থেকে ৫০ হাজার, চর লক্ষীপুরের জিন্নতের ২৫ হাজার, আজিমপুরের রশিদ মোল্লা থেকে ৩৪ হাজার ও আলমের কাছ থেকে ৩২ হাজার, চর আজিমপুর সামছুলের ৩০ হাজার, জয়মন্টপ মঞ্জুরুল ইসলামের ৩০ হাজার, ইরতা শাহীন বক্সের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ছাড়াও সোহেল, নজরুল ভেন্ডার, আমজাদ হোসেন, রিয়াদ মেম্বারসহ প্রায় সকলের কাছ থেকেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আসামীরা জেল-হাজতে থাকাবস্থায় তাদের পরিবারের কাছ থেকে পুনরায় টাকা দাবী করার অভিযোগ ওঠেছে। চাহিদা মতো টাকা না পেলে হাজতি আসামীদের শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানোর তথ্য মিলেছে।
জামির্ত্তা ইউনিয়নের আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি খালিদ মাহমুদ খোকনের পরিবার অভিযোগ করে বলেন, খোকনকে গ্রেফতারের পর ৫ লাখ টাকা দাবী করা হয়। ওই টাকা না দেয়ায় তাকে গোবিন্দলের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়। বর্তমানে সে জামিনে এসে পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। অপরদিকে, মামলার এজাহারভুক্ত নেতাকর্মীর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্য আসে।
সিংগাইর থানা-পুলিশ গ্রেফতার বানিজ্যের মূল হোতা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর।
এ ব্যাপারে সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের ক্লোজের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সত্যতা পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।