সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল আনছে সরকার, ব্যয় ২৫৪ কোটি টাকা
দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা পূরণ এবং সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা। এই চাল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।
আন্তর্জাতিক দরপত্রে সাড়া, সর্বনিম্ন দরদাতা সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান
খাদ্য অধিদপ্তর ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে, যাতে অংশ নেয় মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার প্রস্তাব করে, যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ ডলার) থেকে ২৮.৪৭ ডলার কম। সেই অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটিকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।
প্রস্তাবিত এই দর বাংলাদেশের বাজার দর যাচাই কমিটির পূর্বাভাস থেকেও কম হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাব গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এই দরে চাল আমদানির মোট খরচ দাঁড়াবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার। গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) অনুযায়ী টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় প্রায় ২৫৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরে চাল সরবরাহের পরিকল্পনা
মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে এই চাল সরবরাহ করবে সিআইএফ-এলও শর্তে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক ও ভ্যাট ব্যতীত)। আমদানিকৃত চালের গুণগতমান হবে ৫ শতাংশ ভাঙ্গা নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল।
চাল আমদানির সামগ্রিক পরিকল্পনা
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ৯ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন এবং জি-টু-জি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এর মধ্যে মায়ানমার থেকে ১ লাখ টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৬ টন এবং জি-টু-জি পদ্ধতিতে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টন চাল দেশে এসেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টন চাল সরকারি গুদামে সংরক্ষিত হয়েছে। বাকি চালও ধাপে ধাপে দেশের বিভিন্ন বন্দরে পৌঁছাচ্ছে।
চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান
চাল আমদানির এই উদ্যোগ দেশের বাজারে চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুর্যোগকালীন খাদ্য মজুদও সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে।