ফুটবল মানেই আবেগ, আর সেই আবেগের এক অনন্য নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। আজ, ২৪ জুন ২০২৫—৩৮ বছরে পা দিলেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা। ১৯৮৭ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ক্ষুদে জাদুকর আজ ফুটবল বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠদের একজন, এমনকি অনেকের মতে সর্বকালের সেরা।
শৈশবে হরমোনজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন মেসি। চিকিৎসার খরচ চালানো পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঠিক তখনই ফুটবল ঈশ্বর যেন নিজ হাতে তার ভাগ্য লিখে দেন—এক টিস্যু পেপারে চুক্তি করে তাকে স্পেনে নিয়ে যায় বার্সেলোনা। সেখান থেকেই শুরু মেসি নামক বিস্ময়ের মহাযাত্রা। সেই কিশোর একদিন হয়ে উঠলেন বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়।
বার্সেলোনার হয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন ২০টিরও বেশি বছর। জিতেছেন ক্লাব ফুটবলের প্রায় সব শিরোপা—লা লিগা, কোপা দেল রে, চ্যাম্পিয়নস লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ—সবই আছে তার মুকুটে। ক্লাবের হয়ে ৬৭০টির বেশি গোল করে গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বাঁ পায়ের জাদু, ক্ষিপ্র গতি, বল কন্ট্রোল আর নিখুঁত ফিনিশিং তাকে করেছে ভিন্ন এক কিংবদন্তি।
বার্সেলোনা ছাড়ার পর মেসি পাড়ি জমান প্যারিস সেন্ট জার্মেই-এ (PSG)। সেখানেও তার পারফরম্যান্স ছিল চোখধাঁধানো। তবে আসল মাহাত্ম্য আসে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে। এটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। বহু বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আর্জেন্টিনাকে এনে দেন তৃতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি। সেই বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত, মাঠে ছিলেন দলের নেতা, অনুপ্রেরণা আর শেষ পর্যন্ত শিরোপার নায়ক।
এরপর অনেকেই ভাবছিলেন, মেসি বুঝি এখানেই বিদায় নেবেন। কিন্তু না, তিনি বলেন—এটাই আসল সময় উপভোগের। এরপর যোগ দেন আমেরিকান সকার লিগের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। নতুন পরিবেশ, নতুন চ্যালেঞ্জ, কিন্তু পারফরম্যান্সে এখনো আগের মতোই ধারালো। মাঠে এখনও তার পায়ের জাদুতে বুঁদ হয়ে থাকেন ফুটবলপ্রেমীরা।
ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রেকর্ড ৮ বার, ফিফার বর্ষসেরা হয়েছেন একাধিকবার। জাতীয় দলের হয়ে কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা, অলিম্পিক গোল্ড থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ—সবই এখন তার নামের পাশে। খেলোয়াড় হিসেবে যা যা অর্জন করা সম্ভব, প্রায় সবই তার ঝুলিতে। তবু মেসির মধ্যে ক্লান্তির ছাপ নেই। এখনও জয়ের খিদে প্রবল, এখনও পায়ের জাদুতে বিশ্ব মাতিয়ে চলেছেন।
২০২৬ বিশ্বকাপে তাকে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে যদিও অনিশ্চয়তা আছে, তবে তার ভক্তরা এখনই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন—আরও একটি বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে বিদায় বলবেন তাদের হৃদয়ের অধিপতি। আর আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনিও হয়তো জানেন, এমন একজন মহাতারকাকে ছাড়ার ঝুঁকি নেওয়া যায় না।
৩৮তম জন্মদিনে মেসিকে ঘিরে তাই কেবল একটিই শব্দ—ভালোবাসা। কারণ, তিনি শুধুই একজন ফুটবলার নন, তিনি ফুটবলকে জীবন্ত করে তোলা এক জীবন্ত কিংবদন্তি।