রিয়াল মাদ্রিদের সামনে সুযোগ ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরেকটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের। নিজেদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় খেলতে নামে দলটি। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বরং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চ থেকে এই মৌসুমে মুখ থুবড়ে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনালের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে হার, আর দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধান—রীতিমতো লজ্জাজনক বিদায় রিয়ালের জন্য।
প্রথমার্ধে একমাত্র স্বস্তির মুহূর্ত এনে দেন গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। বুকায়ো সাকার নেওয়া পেনাল্টি ঠেকিয়ে রিয়াল সমর্থকদের মনে সামান্য আশার সঞ্চার করেন। তবে সেই উল্লাস বেশিক্ষণ টেকেনি। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ দলীয় প্রচেষ্টায় গোল করে এগিয়ে যায় আর্সেনাল। গোলদাতা বুকায়ো সাকাই। এরপর একটি ভুলে রিয়াল সমতায় ফেরে। আর্সেনালের ডিফেন্ডার সালিবার ভুলের সুযোগ নিয়ে গোল করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলির গোলে জয় নিশ্চিত করে সফরকারী দল। সেই সঙ্গে নিশ্চিত হয় রিয়ালের বিদায়ও।
এই ম্যাচে রিয়ালের তারকারা ছিলেন কার্যত নিস্প্রভ। কিলিয়ান এমবাপ্পে ছিলেন ছায়ামানব, ভিনিসিয়ুসের খেলায়ও ছিল না সেই চেনা ধার। মাঝমাঠে একা লড়েছেন জুড বেলিংহ্যাম, কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। আক্রমণে ভীতি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন রদ্রিগো, সেবায়োস কিংবা উঠতি তারকা এন্ড্রিকও।
গোল ডটকম–Of দেওয়া খেলোয়াড়দের রেটিং অনুযায়ী পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ:
🔹 থিবো কর্তোয়া (৬/১০) – শুরুতে পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন, তবে গোল বাঁচাতে পরবর্তীতে আর কিছু করার ছিল না।
🔹 লুকাস ভাসকেজ (৫/১০) – দৌড়ঝাঁপ থাকলেও কার্যকর ছিলেন না, ক্রসগুলো যথারীতি এলোমেলো।
🔹 রাউল আসেনসিও (৫/১০) – পেনাল্টির ঘটনায় ভাগ্যের কাছে হার মানতে হয়েছে।
🔹 আন্তোনিও রুডিগার (৬/১০) – কিছু ট্যাকল করলেও ধুন্ধুমার আর্সেনাল আক্রমণের বিপরীতে নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি।
🔹 ডেভিড আলাবা (৪/১০) – শুরুতেই হলুদ কার্ড, পরে সাকার বিপক্ষে বারবার পজিশনিংয়ে ভুল।
🔹 চুয়ামেনি (৫/১০) – পাসে ছিলেন ধারাবাহিক, তবে রক্ষণে বেশ নড়বড়ে।
🔹 ফেদেরিকো ভালভার্দে (৫/১০) – চেনা ছন্দে ছিলেন না, দৌড়ঝাঁপ করলেও ফল আনতে পারেননি।
🔹 জুড বেলিংহ্যাম (৫/১০) – মাঝমাঠে একা যুদ্ধ করলেন, কিন্তু সাপোর্টের অভাবে কাজের কাজ হয়নি।
🔹 রদ্রিগো (৫/১০) – কিছু মুহূর্তে আলো ছড়ালেও বদলির আগে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি।
🔹 কিলিয়ান এমবাপ্পে (৪/১০) – শুরুটা আশাব্যঞ্জক হলেও ইনজুরিতে থেমে যায় তার রাত।
🔹 ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (৪/১০) – একমাত্র গোল করলেও খেলায় কোনো দিকনির্দেশনা বা নেতৃত্ব ছিল না।
বদলি খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুটা আলো:
– ফ্যান গার্সিয়া (৬/১০) – আক্রমণে খানিকটা প্রাণ ফেরান, রক্ষণে ছিলেন দুর্বল।
– দানী সেবায়োস (৫/১০) – মাঝমাঠে সামান্য উপস্থিতি থাকলেও তেমন কিছু করতে পারেননি।
– এন্ড্রিক (৬/১০) – শেষদিকে উঠে এলেও সাফল্য এনে দিতে পারেননি, তবু চেষ্টা চোখে পড়েছে।
– লুকা মডরিচ – সময়ের স্বল্পতায় প্রভাব ফেলতে পারেননি।
কোচ আনচেলত্তির পরিকল্পনায় ঘাটতি:
রিয়ালের ব্যর্থতায় সবচেয়ে বড় সমালোচনার মুখে কোচ কার্লো আনচেলত্তি। খেলায় কোনো নতুন কৌশলের ছাপ ছিল না, খেলোয়াড় পরিবর্তনেও সাহস দেখাননি। গোল ডটকম তাকে দিয়েছে মাত্র ৩/১০। এই হারের পর তাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে—আসছে মৌসুমে তিনিই কি রিয়ালের ডাগআউটে থাকবেন?