অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিল পাকিস্তান । ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান দলের ওপর বন্দুক হামলার পর ছয় বছর লেগেছিল জিম্বাবুয়ের দলকে সেখানে নিয়ে যেতে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজও সফর করে।
এসব সাফল্যের২৯ বছর পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট পায় পাকিস্তান। পাকিস্তান রুপিতে প্রায় ১২ হাজার কোটি খরচ করে দেশের তিনটি ক্রিকেট ভেন্যু সংস্কার করেছে। বিদেশি দলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাহোরেই ১০ হাজার পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে।
ক্রিকেটবিশ্বকে আস্থায় নিতে বিদেশি দর্শকদের জন্যও ভিসা সহজ করা হয়েছে। আয়োজনে সামর্থ্যের সবটুকুই দিয়েছে পিসিবি (পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড)। বুধবার নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটিই ছিল এবারের আসরে পাকিস্তানের ভেন্যুতে শেষ ম্যাচ। আসর শেষে প্রশ্ন থেকেই যায়, কতটা সফল হয়েছে আয়োজক পাকিস্তা
হয়তো বাবর আজমরা টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচ জিততে পারেননি, বৃষ্টির কারণে তিনটি ম্যাচ বাতিল হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হওয়ায় স্বস্তি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের। আনন্দ তাদের এই মর্যাদার আসর আয়োজনেই। ‘ক্রিকেটবিশ্বের কাছে আমরা ইতিবাচক একটি বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি, পাকিস্তানে খেলাটা অন্য সব দেশের মতোই নিরাপদ।
পিসিবির মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক সামি উল হাসান এভাবেই নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।
আসলে আইসিসির এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে দুটি লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের। প্রথমত, তাদের ক্রিকেট দলের সাফল্য। ঘরের মাঠে ফাইনাল খেলাটা খেলা হলো না তাদের। প্রথম ম্যাচে করাচিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে এবং পরের ম্যাচে দুবাইয়ে ভারতের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় রিজওয়ানদের।
শেষ ম্যাচ রাওয়ালপিন্ডিতে বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তাই পাকিস্তান দলের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় লক্ষ্যটি ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের সামনে পাকিস্তানের মাটিতে সফল আয়োজন করে দেখানো।
বৃষ্টির কারণে লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছে। দুটি মাঠের ড্রেনেজ ব্যবস্থা মোটেই বিশ্বমানের ছিল না।
লাহোরের মতো নতুন সংস্কার করা ভেন্যুতেও পুরো মাঠ ঢেকে রাখার মতো কাভার ছিল না। একটি মাত্র সুপার শপার দিয়ে আউট ফিল্ড খেলা উপযোগী করা যায়নি। রাওয়ালপিন্ডির ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল আরও বাজে। লাহোরে পরিত্যক্ত ম্যাচে পয়েন্ট খুইয়ে হতাশ ছিল আফগানরা। নিরাপত্তার শিথিলতা নিয়েও সমালোচিত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে। আফগানিস্তানের দুটি ম্যাচেই মাঠে রাজনৈতিক এক নেতার ছবি নিয়ে কিছু দর্শক ঢুকে যাওয়াকে ভালোভাবে নেয়নি অনেকে।
এর সঙ্গে আয়োজক পাকিস্তান জোর ধাক্কা খেয়েছে আসলে আসরের শুরুতে হাইব্রিড মডেলের কারণে। ১৫ ম্যাচের এই আসরে ১০টি পেয়েছিল পাকিস্তানের তিনটি ভেন্যু। যার তিনটিই আবার বৃষ্টিতে ভেস্তে গেছে। তা ছাড়া পাকিস্তান তাদের প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর সেভাবে আসরের বাকি ম্যাচগুলোতেও দর্শক কম ছিল । শুধু আফগানিস্তান ম্যাচে গ্যালারিতে আফগানদের উপস্থিতির চোখে পরার মত ছিল।
দুবাই লাভবান হয়েছে ফাইনালসহ পাঁচটি ম্যাচ পেয়ে।ভালো খেলা উপহার দিতে না পারার কারণে বিদায় নেওয়ার পর এভাবেই দর্শকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন রিজওয়ান। এই আসরের পর আগামী ছয় বছরে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট নেই পাকিস্তানের মাটিতে। শুধু এ বছর নারী বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের কিছু ম্যাচ রয়েছে সেখানে। পরবর্তী আইসিসির আসর পেতে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হয় তাদের!