স্টাফ রিপোর্টার :
মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’ গানকে সামনে রেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাঁকজমকভাবে দুই দিনব্যাপী ১২৬তম নজরুল জয়ন্তী ২০২৫ রবিবার (২৫ মে ২০২৫) শুরু হয়েছে। বিশ্ব বিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চে’ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নজরুল জয়ন্তীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। বিশ্ব বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর অল্প সময়ের মধ্যে এতো লিখা লিখেছেন যা বলে শেষ করার মতো নয়। মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল কবির লিখা এমন লক্ষ লক্ষ লাইন রয়েছে। তিনি ছিলেন দ্রোহের কবি, সংগ্রামের কবি, সাম্যের কবি, প্রেমের কবি। তাঁর বিচরণ ছিল বাংলা সাহিত্যের সবখানে। কবি নজরুলের সেই সংগ্রামী আদর্শকে খুব ভালোভাবে ধারণ করে জুলাই আন্দোলনে আমাদের তরুণ প্রজন্ম নতুন একটি দেশ উপহার দিয়েছে। তারা অনেক রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে।’
প্রধান অতিথি আরও বলেন, ‘দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থের জন্য ইউজিসির নিকট দাবি জানায়, আমরা অর্থাৎ ইউজিসি দাবি জানাই সরকারের কাছে আর সরকার বলছে সব অর্থ তো বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে।’
সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই নজরুলের বিদেহী আত্নার মাগফিরাত কামনা করে বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ত্রিশালের সন্তান হিসেবেই সকলেই মনে করে। সেটার রিফ্লেকশন আমরা দেখতে পাই এই অঞ্চলে নজরুলের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নে। ময়মনসিংহ তথা ত্রিশাল যেন নজরুলময় অঞ্চল।’
‘নজরুল নিকেতন’ হিসেবে বিশ্ব বিদ্যালয়কে গড়ে তোলার আশাবাদ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘কোলকাতায় যেমন বিশ^ভারতী, শান্তিনিকেতন হয়েছে আমরা সরকারের ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সহযোগিতায় এই নজরুল বিশ্ব বিদ্যালয়কে নজরুল নিকেতন হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি, সেভাবে এগিয়ে যাব।’
মাননীয় উপাচার্য বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যে নজরুলের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। নজরুলের চেতনা ও দর্শনকে সকলের সামনে বারবার তুলে ধরার তাগিদ দেন। নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আগত সম্মানিত অতিথি এবং অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে যারা বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান মাননীয় উপাচার্য।
উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. জেহাদ উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রায়হানা আক্তার ও ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লাল হোসাইন।
এর আগে সকাল ১১টায় অতিথিদের সাথে নিয়ে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম নজরুল ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাননীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। এরপর অতিথিগণ নজরুল জয়ন্তী উদ্বোধন ও আলোচনা সভার জন্য ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। সভার শুরুতে নজরুল সংগীত ‘অঞ্জলী লহ মোর….’ পরিবেশন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা নচরুল জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত বইমেলার উদ্বোধন করেন। এছাড়া মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম অতিথিবৃন্দকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখান।
দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে আন্তর্জাতিক নজরুল-বক্তৃতামালা-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষক, গবেষক ও নজরুল অনুরাগীরা এদিন পাঁচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া সন্ধ্যা সাতটায় ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চে’ আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ. এইচ. এম. কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, আইন অনুষদের ডিন জনাব মুহাম্মদ ইরফান আজিজ, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) ড. মো. আশরাফুল আলম, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স) সহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।