মোঃ রাহাদ আলী সরকার – মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম ভাঙিয়ে রেল মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে অধিদপ্তরে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে।জানা যায় সেই যুবকের নাম মোঃ আশিকুর রহমান, তার বাসা মাগুরা এবং নিজেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী পরিচয় দিতেন।
গত ২৩ এপ্রিল অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।সেখানে তিনি সেই যুবকের নাম সহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে বলেন,দুই মাস মেয়াদি ফ্রি পাস ইস্যুর সুবিধা নিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকার টিকিট সংগ্রহ করেছে তারা।
মাহবুব কবীর মিলনের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর তিন সক্রিয় সদস্য এবং রাজউক কলেজের এক শিক্ষার্থীকে রেলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছে। এমনকি রেলের ইঞ্জিন ডিজাইন, সক্ষমতা ও উন্নয়ন সম্পর্কেও মতামত দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে—যা শুনতে হাস্যকর হলেও বাস্তব বলে দাবি করেন এই অতিরিক্ত সচিব।
এই চারজনের অন্যতম, মাগুরার মো. আশিকুর রহমান নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির (বর্তমানে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই শিক্ষাবর্ষে এই নামে কেউ নেই। তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে প্রথমে তিনি দাবি করেন, পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যাননি। তবে মেধাতালিকা বা অপেক্ষমাণ তালিকার কোনোটিতেই আশিকের নাম নেই। পরে আশিক স্বীকার করেন, তিনি বর্তমানে কোথাও পড়াশোনা করছেন না এবং মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ছাত্র পরিচয় দিয়ে সুবিধা নিয়েছেন।
তার ফেসবুক ঘুরে দেখা যায়, রেলের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা ও পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন তিনি। মাহবুব কবীর মিলনের ফেসবুক পোস্টে আশিকসহ আরও কয়েকজনকে রেলের “উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ” ও “রেলওয়ে কল্যাণে পরামর্শ প্রদান”-এর সুযোগ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই মাস মেয়াদি ফ্রি পাস ইস্যু করা হয়। ফ্রি পাসের চিঠিতে উল্লিখিত আশিকসহ বাকিরা মিলে এই পাস ব্যবহার করে এসি বার্থ ও স্নিগ্ধায় বিনামূল্যে ভ্রমণ করেছেন। এই কয়েক মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যের টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে আশিক বলেন, তিনিসহ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদল রেলের জমি উদ্ধারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। এই কাজের জন্য বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করার ব্যয় নিজেদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বলে রেল উপদেষ্টার মাধ্যমে এই পাস নেওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।
মাহবুব কবীর মিলনের পোস্টে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তারা একই তারিখে একাধিক গন্তব্যে একই নাম ও পরিচয়ে ভ্রমণ করেছেন বলে দেখা গেছে। যেমন, একই দিনে একজন ব্যক্তি ঢাকা-কক্সবাজার এবং ঢাকা-রাজশাহীর টিকিট বুক করেছেন, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তারা এই ফ্রি পাসের অপব্যবহার করে টিকিট কালোবাজারিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব লেখেন, এদের কর্মকাণ্ড এখানেই থেমে থাকেনি। ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে তারা বড় বড় রেলস্টেশনগুলোতে দোকান বরাদ্দের আবেদন করেছে, এমনকি প্রাইভেট ট্রেন পরিচালনার অনুমতির জন্যও প্রস্তাব দিয়েছে। সম্প্রতি একটি বদলি বাণিজ্য সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে, যেখানে তাদের নাম জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
এভাবে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ক্ষুন্ন হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও আশিকুর রহমান নিজ এলাকায় নিজেকে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।