আহসান হাবীব রানা, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন, চেম্বারে ডেকে কুপ্রস্তাব, গভীর রাতে ফোন ও মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠানোসহ বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ২৩ জন শিক্ষার্থী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদার কাছে এই লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষক বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে সাড়া না পেলে সেগুলো আনসেন্ট করে দেন। রাতের বেলায় ফোন দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এবং নিজেকে ‘বন্ধু’ পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ হতে চান।
বিভাগের সভাপতির নিকট দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল ইসলাম মেয়েদের গভীর রাতে কল দিয়ে বিরক্ত করেন। বিশেষ করে তিনি ম্যাসেঞ্জারে কল দেন যাতে ফোনকল রেকর্ড করা না যায়। নিজেকে মেয়েদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ে ক্লোজ হতে চান, ম্যাসেঞ্জারে কল দেওয়া, নানারকম উত্যাক্তকারী ম্যাসেজ দেবার পর সাড়া না পেলে তিনি প্রমাণ মুছতে ম্যাসেঞ্জার থেকে সকল মেসেজ আনসেন্ট করে দেন।
দ্বিতীয়ত, ক্লাসরুমে মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে বিবাহিত মেয়েদের দাঁড় করিয়ে বা উদ্দেশ্য করে বিবাহিত জীবন, দাম্পত্য জীবন, হাজবেন্ডের সাথে বোঝাপড়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন। এতে মেয়েরা বিভ্রান্ত ও অপমানিত হওয়ার পরেও শিক্ষক হিসেবে উনার মাঝে কোনধরনের বিকার লক্ষ্য করা যায় না। ক্লাসে বিভিন্ন টপিক পড়ানোর ক্ষেত্রেও মেয়েদের উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ উদাহরণ টানেন এবং যেকোন বিষয় নিয়ে বাজে ইঙ্গিত করে কথা বলেন। তাছাড়া, মেয়েদের তার চেম্বারে একা ডেকে নিয়ে নানারকম কুপ্রস্তাব দেন তিনি। এতে রাজি না হলে পরীক্ষায় নাম্বার কমিয়ে দেবার হুমকি দেওয়া হয় যাতে মেয়েরা বাইরে কথা বলার সাহস না করে।
এছাড়াও আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্লাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৫ মিনিট দেরি হলেও ঢুকতে না দেওয়া, টিউটোরিয়ালের মার্ক ও উপস্থিতির নাম্বারের বেলায় স্বজনপ্রীতি এবং সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে অতিরিক্ত খাতা বাঁধতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের খাতা ছিড়ে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, একটি কোর্সে রিটেক থাকায় উনি আগেরদিন আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে বলেন যে রিটেকের প্রশ্ন ও খাতা দেখার দায়িত্ব তার। এই ছুতোয় প্রায় ১ ঘন্টা তিনি আমাকে হ্যারেজ করেন, বডির কমপ্লিমেন্ট দেন এবং পরীক্ষার দিন অনেকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় পরবর্তী দিন রুমে ডেকে রেজাল্ট খারাপ করানোর হুমকি দেন এবং উনার সাথে সুসম্পর্ক রেখে রেজাল্ট ভালো করার আশ্বাস দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অভিযোগগুলো শুধুমাত্র বিভাগের সভাপতি বরাবরই জমা দিয়েছি। বিভাগের সভাপতি স্যার জানিয়েছেন, বিভাগের ভালো নাম ধরে রাখতে প্রশাসন বরাবর যাতে আমরা অভিযোগ না দেই। যদিও অভিযোগ প্রদানের পর তাকে সব ধরণের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে কিন্তু আমরা এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই তাকে স্থায়ীভাবে শিক্ষকতা থেকে বহিষ্কার করা হোক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ক্লাস পরীক্ষার ব্যাপারে আমি খুবই সিনসিয়ারলি কাজ করি। করোনা কালীন সময়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি থাকাকালে তারা কয়েকজন আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পরীক্ষা দিতে পারবে না উল্লেখ করে আবেদন দিয়েছিল। সেই সূত্র ধরে আমি তাদের অভিভাবকদের কাছে ফোন দিয়ে কনফার্ম হতে চাইলে অভিভাবকরা বিষয়টি অস্বীকার করেন। সেখান থেকেই আমার উপর তাদের ক্ষোভ ছিলো। আর ক্লাসে দেরিতে আসলে আমি উপস্থিতির নাম্বার দেই না, টিউটোরিয়ালে যা পায় তাই দেই। এসব কারণে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এসব অভিযোগ তুলেছে।
গভীর রাতে ফোনকলের ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক সময় সিআররা ফোন দেয় ক্লাসের সময় জানার জন্য। ওইসময় ফোন ধরতে না পারলে পরবর্তীতে আমি ফোন করে জানিয়ে দেই, এর বেশি কিছু না। তবে রাগের মাথায় অনেক সময় হয়তো ক্লাসে বকাঝকা করেছি, সেটা আমার ভুল হয়ে থাকতে পারে। কারণ কার মেন্টালিটি কখন কেমন আছে সেটা ত বোঝা যায় না, হয়তো আমার কোন কথা তাদের খারাপ লেগে যেতে পারে৷ বিভিন্ন কাজের সুবাদে বা কোন অনুষ্ঠানে আমি পজেটিভলি সুন্দর ড্রেস পরে আসার কথা বলেছি। কিন্তু কোন মেয়েকে আমি ওইভাবে কিছু বলি নাই।
বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা বলেন, শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা আনীত অভিযোগের ব্যাপারে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। পরবর্তীতে নিয়মানুযায়ী একাডেমিক কমিটির সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আপাতত তাকে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।