মাহফুজুল হক পিয়াস, ইবি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মারধরের শিকার তিন সাংবাদিক। এসময় ভুক্তভোগীরা মারধরের বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
রবিবার (১৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন তারা। ভুক্তভোগীরা হলেন, দৈনিক আমাদের বার্তা পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফ বিল্লাহ, দৈনিক আজকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রবিউল আলম ও বার্তা২৪ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নূর ই আলম।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ দত্ত, সাব্বির, মিনহাজ, সৌরভ সোহাগ, পান্না এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর ও হৃদয়সহ ২০-২৫ জন।
অভিযোগপত্রে আরিফ বিল্লাহ উল্লেখ করেন, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল খেলায় দুই পক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটে।সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মোবাইলে ভিডিও করতে গেলে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আফসানা পারভীন তিনা মোবাইল ফোন কেড়ে নেন, যা এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
পরবর্তীতে একই বিভাগের নাহিদ হাসান, সাব্বির, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ সোহাগ, পান্না এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর ও হৃদয়সহ আরও কয়েকজন তার ওপর হামলা চালায়। তারা আরিফকে ঘিরে ধরে কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। এসময় বার্তা২৪-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নূর ই আলম ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
আরিফ আরও জানান, সমন্বয়ক এস এম সুইট, রোভার স্কাউটের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সায়েম এবং ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি নাজমুল হোসাইন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদের সামনেই পুনরায় আরিফের ওপর আবারো হামলা চালায়। এসময় সাংবাদিক রবিউল আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তারা রবিউলকেও কিল-ঘুষি ও লাথি মারে, ফলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে সমন্বয়ক সুইট, সায়েম ও রব্বানী তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।’
অপরদিকে অভিযোগে সাংবাদিক নূর ই আলম বলেন, “সহকর্মী আরিফের ওপর হামলার খবর পেয়ে ভিডিও করতে গেলে আমাকেও মারধর করে। অর্থনীতি বিভাগের মিনহাজ, অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর ও হৃদয়সহ ১০-১৫ জন। আমাকে ঘিরে ধরে কিল-ঘুষি মারে এবং ঘাড়ে আঘাত করে তারা। পরে সুইট ভাই ও রব্বানী ভাই এসে আমাকে উদ্ধার করেন।”
তিনি আরও জানান, “কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ইনকিলাবের সাংবাদিক রাকিব রিফাত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক রাকিব রেদোয়ান এবং নয়া শতাব্দীর সাংবাদিক নূর আলমের ওপরও হামলা চালানো হয়।”
মারধরের শিকার হওয়া আরেক সাংবাদিক রবিউল আলম বলেন, “আমি টিএসসি থেকে বের হয়ে দেখলাম যে এখানে ঐ টিএসসির সামনে জটলা অবস্থায় আছে। আমি জানি না কি ঘটেছে। আমি যখন ভিডিও করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি, তখন কয়েজন এসে বলে তুমি ভিডিও করছো নাকি? আমারে বলতেছে ওর মোবাইলটা কেড়ে নে। ভিডিও করছে কিনা দেখ, চেক করে ডিলিট করে দে। আমি বলি, ‘আমি তো সাংবাদিক। আমার মোবাইল এভাবে সার্চ করছেন কেন আপনারা?’ এইটা বলার সাথে সাথেই ওদিক থেকে নাহিদ দৌড়ে এসে আমার পেটে লাথি মারে ও চারদিক থেকে আরও যারা আছে তারাও মারার জন্য আসলে আমি দৌড়ে পালিয়ে আসি।”
ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা তাদের অভিযোগে হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সাংবাদিকের তলপেটে লাথি মারার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো সাংবাদিককে মারি নি, কোনো এক সাংবাদিক আমার বুকে লাথি মারছে।”
এ বিষয়ে অভিযোগপত্রে নাম থাকা আফসানা পারভীন তিনাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, “আমরা অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের সাথে বসবো। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”