Iqbal Hassan Mahmud Sajid, Butex Representative:
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শহীদ আজিজ হলে হামলার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এতে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা চরম অনিরাপত্তায় দিন পার করছে। যেকোনো সময় আবারও হামলার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৪ নভেম্বর রাতে বুটেক্সের শহীদ আজিজ হলে সন্ত্রাসী কায়দায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। এতে শহীদ আজিজ হল এবং বুটেক্সের বিটাক মোড় সংলগ্ন গেট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় বুটেক্সের প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম ব্যাচের মেধাবী শিক্ষার্থী উৎসব পাল আজীবনের জন্য এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।
শিক্ষার্থীরা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করে এবং দ্রুত হলগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি তোলে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দেয় যে, হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে এবং হলের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য আনসার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে হল-সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস পার হলেও হলগুলোতে আনসার নিয়োগের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখনো হলে অবাধে যে কেউ প্রবেশ ও বের হতে পারছে, যা হলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাঈফ মাহমুদ বলেন, নিরাপত্তার জন্য আমাদের আনসার দেওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যকরী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। মেইন গেটসহ হলের বাইরের কিছু অংশে এখনো কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে না, প্রস্তুতিটাই আসল। হল প্রভোস্ট স্যার দারোয়ানদের কার্যক্রম বাড়িয়েছেন, তা স্বীকার করতেই হবে। তবে আমাদের হল গেটের আধুনিকায়ন হওয়া প্রয়োজন, যেখানে আইডি কার্ড পাঞ্চ করে প্রবেশ করতে হবে। এতে বহিরাগতদের প্রবেশ কমবে। আমরা চাই, যেকোনো বিপদ আসার আগেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহাদ ইমন বলেন, হামলার তিন মাস অতিক্রম হওয়ার পরেও প্রশাসন দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কিছুদিন আগে গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে, সন্ত্রাসীরা আবারও শহীদ আজিজ হলে হামলার পরিকল্পনা করছে। সব জানা সত্ত্বেও প্রশাসন এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রধান চাওয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে শহীদ আজিজ হলের নিরাপত্তা জোরদার করা। হামলায় জড়িত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় যদি আমরা আবারও কোনো অযাচিত হামলার শিকার হই, তবে তার সম্পূর্ণ দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, হলের নিরাপত্তা যতটুকু আছে, তা সন্তোষজনক। এটা নিশ্চিত থাকো যে, ভবিষ্যতে আর এমন হামলা হবে না। পুলিশের সহায়তা বর্তমানে কম পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমরা এখন আনসার সদস্য আনার চেষ্টা করছি। তবে আনসারদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারায় এই প্রক্রিয়া আটকে আছে। আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হলে থাকতে চাচ্ছেন না, তারা ভিজিটে আসতে চাচ্ছেন। তাদের থাকার জায়গা নির্ধারণ করলেই আনসার নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন হবে। আমরা পরিকল্পনা করছি, পুরাতন ক্যান্টিনের জায়গায় আনসারদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে এবং সেখানে থাকা চারটি ক্লাব রুমকে পুরাতন ভবনে স্থানান্তর করা হবে।