Jasim Uddin, Nobiprabi Correspondent
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গ্রেড-১ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে তার অতীত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সাম্প্রতিক এক উসকানিমূলক ভিডিও কনটেন্টে প্রকাশ্য মন্তব্যকে ঘিরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি ছাত্রলীগ, নোবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভ একটি ভিডিও ব্লগ প্রকাশ করেন, যেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য উঠে আসে। ভিডিওটিতে ইউনূসকে ‘আমেরিকান ডিপ স্টেটের পুতুল’ আখ্যা দিয়ে দাবি করা হয়, তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে।
ড. ইউসুফ মিয়া ঐ ভিডিওর নিচে মন্তব্য করেন:
“এতো সুন্দর করে অল্প বুঝালে জাহিদ। অভাগা বাঙালিদের বুঝ দাও হে দয়াময় প্রভু।”
এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন সিনিয়র শিক্ষক কিভাবে একটি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডামূলক ভিডিওর এমন প্রকাশ্য প্রশংসা করতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একজন শিক্ষকের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশিত। যখন তিনি উসকানিমূলক রাজনৈতিক বক্তব্য সমর্থন করেন, তখন সেটি পুরো একাডেমিক পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
পূর্ব রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
অধ্যাপক ইউসুফ মিয়ার বিরুদ্ধে অতীতে আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তি লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি সরকারপক্ষীয় অবস্থান প্রকাশ করে থাকেন।
প্রশাসনের বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ তামজিদ হোসেইন চৌধুরী জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উপাচার্য ৭ জন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারেন। সেই নিয়ম অনুযায়ীই অধ্যাপক ইউসুফ মিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”
তবে নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাকে মনোনীত করা হয়েছে। অভিযোগ আসার পর একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিতে বিষয়টি জমা হয়েছে। সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছাত্রদের বক্তব্য
শিক্ষার্থীরা বলছেন, “রাষ্ট্রবিরোধী বা উসকানিমূলক বক্তব্য সমর্থনকারী ব্যক্তির হাতে একাডেমিক নীতিনির্ধারণ ক্ষমতা তুলে দেওয়া শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে।”
Last words
নোবিপ্রবির শিক্ষক সমাজ এবং শিক্ষার্থীরা এখন তাকিয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। প্রশ্ন উঠেছে—এই মনোনয়ন কি শুধুই ‘জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে’, নাকি রাজনৈতিক প্রভাবের ফল? সময়ই এর উত্তর দেবে।