রুশাইদ আহমেদ, বেরোবি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) হঠাৎ করে সেমিস্টার ফি বাড়ানোর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে তারা মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ও ফর্ম পূরণের ফি বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। এ ছাড়া, অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সহায়তা ও ফি মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি সেমিস্টারের ফি প্রদানের সময় অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন আগে নির্ধারিত পরিমাণ জানিয়ে দেওয়ার দাবিও তুলে ধরেন তারা।
ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগের ভিসির আমলে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের মেয়াদকালে একটি একাডেমিক কাউন্সিল সভায় সেমিস্টার ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিষয়টি তখন শিক্ষার্থীদের নজরে না এলেও, সম্প্রতি তা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
টাকার অঙ্কে ফি বাড়ার চিত্র
অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেমিস্টার ভর্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফি পূর্বের ৩৫ টাকা (প্রতি ক্রেডিট) থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ টাকা (প্রতি ক্রেডিট)। কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্টের ফি-ও পূর্বের তুলনায় প্রতি ক্রেডিটে ২০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। অ্যাডমিশন ফি ১০০ টাকা থেকে এক লাফে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এ ছাড়া, পরিবহন ও চিকিৎসা ফি-ও করা হয়েছে দ্বিগুণ, যথাক্রমে ৬০০ ও ২০০ টাকা। ইলেকট্রিসিটি ফি ১২০ টাকার বদলে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে অ্যাডমিশন ফি ৪০০% এবং টিউশন ও কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্ট ফি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪০%।
যা বলছেন শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবর্তনের শিক্ষার্থীই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে, স্মারকলিপি প্রদান ও ফি কমানোর দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও একাত্মতা প্রকাশ করছেন তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষাথী সানজিদ সরকার সরণ সেমিস্টার ফি পুনর্বিবেচনার করার দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের সেমিস্টার ফি শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা না ভেবেই কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়া হঠাৎ করেই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অসচ্ছল শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বোঝা উচিত এখানে শুধু ধনী শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা আসেন না। অনক দরিদ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থীও রয়েছেন। আমরা চাই পূর্বের যে ফি ছিলো তার থেকেও যদি কমানো যায় তাহলে ভালো; নয়তো পূর্বেরটাই বহাল থাকুক।
পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিল সভায় হতে পারে সুরাহা
এ দিকে, স্মারকলিপি গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিষয়টির সমাধান হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিক।
ইলিয়াছ বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ন্যায্য দাবির সঙ্গে আমরা একমত। আমরা ইতোমধ্যেই তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের বক্তব্য শুনেছি। শিগগিরই একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আশা করি আমি। তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে যে কোনো অপচেষ্টার বিষয়েও শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।