Shahriar Kabir, Paikgachha
খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল পাইকগাছায় প্রতিবছর তরমুজ চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকরা।তরমুজ রবি মৌসুমের একটি ফসল। এটি সুস্বাদু একটি ফল। বাজারে এর চাহিদা ও রয়েছে বেশ। এর উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং অল্প দিনেই বাজারজাত করা যায়। এজন্য অন্যান্য ফসলের তুলনায় তরমুজ চাষ অনেক বেশি লাভজনক। এ কারণে উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় প্রতিবছর বাড়ছে তরমুজের আবাদ। কোটি কোটি টাকার উৎপাদিত তরমুজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে অত্র উপজেলায় ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা বিগত বছরের চেয়ে ৭’শ হেক্টর বেশি। প্রতিবছর তরমুজ চাষের সাথে যুক্ত হচ্ছে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা। পতিত এবং ফেলে রাখা জমিতে তরমুজ চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বেকার যুবকরা সহ বিভিন্ন পর্যায়ের তরমুজ চাষিরা। এসকল সফল তরমুজ চাষিদের তালিকায় রয়েছে শান্ত কুমার মন্ডল। এবছর তিনি ২৫ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। বাম্পার ফলন ও হয়েছে। তবে খাল খনন, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার মাধ্যমে তরমুজ চাষ ব্যবস্থা কে সহজ করতে পারলে তরমুজ চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং এর মাধ্যমে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করছেন তরমুজ চাষীরা।
ইতোপূর্বে এলাকার অর্থনীতির চাকা দীর্ঘদিন সচল করে রেখে ছিল সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি। রোগবালাইয়ের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া সহ নানা কারণে চিংড়ি শিল্প এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। এদিকে চিংড়ির পরেই অর্থকরী ফসলের তালিকায় যুক্ত হয়েছে রবি মৌসুমের অন্যতম অর্থকরী ফসল তরমুজ। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এ এলাকায় বর্তমানে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে তরমুজ। মাত্র ৩ মাসে বাজারজাত করা যায় এবং উৎপাদন খরচ ও তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় তরমুজ চাষ অধিক লাভজনক মনে করছেন এলাকার কৃষক সহ সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ। প্রতিবছর তরমুজের আবাদ বাড়ছে এবং তরবজ চাষের সাথে যুক্ত হচ্ছে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একরামুল হোসেন বলেন বিগত বছরের ১ হাজার ৪৪৫ হেক্টরের স্থলে এবছর ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা বিগত বছরের চেয়ে ৭’শ হেক্টর বেশি। মোট আবাদের ১ হাজার ৯০ হেক্টর দেলুটিতে এবং ১ হাজার ৫০ হেক্টর গড়ইখালীতে।
গড়ইখালীতে ২৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে সবার নজরে এসেছেন শিক্ষিত তরুণ তরমুজ চাষি শান্ত কুমার মন্ডল। শান্ত উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের কুমখালী গ্রামের অমল কৃষ্ণ মন্ডলের ছেলে। ডিগ্রি পাশ করে ২০২১ সালে ৫ বিঘা জমিতে প্রথম তরমুজ চাষ করেছিল। ৩ বছর পর এবার এলাকার পতিত এবং ফেলে রাখা ২৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড এফ-১ জাতের তরমুজ চাষ করে সফল তরমুজ চাষির পরিচয় দিয়েছে। বর্তমানে তার ফসলের বয়স ৬০ দিন। তরমুজে ভরে গেছে সমস্ত ক্ষেত। পরাগন করার কারণে অন্যান্যদের তুলনায় তার ক্ষেতে প্রচুর ফল ধরেছে এবং দ্রুত বড় হচ্ছে বলে শান্ত জানান। ফলের আকৃতি ও অনেক সুন্দর। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি ফলের ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি হবে এবং বাজারজাত করা যাবে বলে মনে করছেন তিনি। প্রতিদিন ৫ জন শ্রমিক কাজ করছে তার ক্ষেতে।
ডিগ্রি পাশ দীপক বর্মন ও নমিতা মন্ডল তার ক্ষেতের নিয়মিত শ্রমিক। দীপক ও নমিতার মতো রবি মৌসুমে তরমুজের ক্ষেতে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করছে এলাকার শত শত নারী পুরুষ। ২৫ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে এবং কমপক্ষে বিঘা প্রতি ১ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তরমুজ চাষি শান্ত। সফল তরমুজ চাষি শান্ত কুমার মন্ডল বলেন তরমুজ চাষের বিপুল সম্ভাবনা যেমন রয়েছে সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতা ও অনেক বেশি।
তিনি বলেন আমি ২৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি কিন্তু সেচের কোন ব্যবস্থা নাই। কৃষি সমৃদ্ধ এ ইউনিয়নে এ পর্যন্ত কোনো খাল খনন করা হয়নি। ক্ষেতের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যুৎ লাইন নাই। নেই কোন পুকুর জলাশয়। ফলে বাধ্য হয়ে জেনেরেটর দিয়ে পানির ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এ কারণে উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেশি হয়েছে।
এছাড়া অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষি উপকরণ এবং উৎপাদিত তরমুজ পরিবহনে অনেক ভোগান্তি হয় পাশাপাশি বাজারজাত করার সময় সঠিক দাম পাওয়া যায় না। এতে লাভ অনেক কমে যায় এবং তরমুজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে অনেকেই। শান্ত’র মতে বিলের খাল খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে তরমুজ চাষ অনেক বেশি লাভজনক এবং তরমুজ চাষে অনেকেই এগিয়ে আসবে। এতে বেকারত্ব দূরীকরণ সহ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে বলে তিনি মনে করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একরামুল হোসেন বলেন তরমুজ স্বল্প মেয়াদি একটি লাভজনক ফসল। রবি মৌসুমে বিলের পতিত এবং ফেলে রাখা জমিতে তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে উন্নত বীজ সরবরাহ সহ কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান। খাল খনন সহ তরমুজ চাষ সহজ করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে ও তিনি জানান।
তরমুজ চাষ সহ কৃষকের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন এখানকার তরমুজ সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মান সম্মত উপায়ে বেশি বেশি উৎপাদন করে তরমুজ চাষের সম্ভবনা কে কাজে লাগাতে হবে। এবং এব্যাপারে কৃষকদের সমস্যা দূরীকরণ সহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী এ কর্মকর্তা জানান।