অমৃত জ্যোতি রায় সামন্ত,(স্টাফ রিপোর্ট ):
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলা সদর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বস্তোয়নী ব্রতধারী ডাঃঅরুণ কুমার সামন্ত।তিনি মধ্যনগর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক অমৃত জ্যোতি রায় সামন্তের পিতা।১লা জুলাই মঙ্গলবার বেলা এগারোটা পঞ্চাশ মিনিটে বার্ধক্য জনিত কারণে বৈঠাখালী নতুনপাড়ার নিজবাড়ীতে শেষ নিশ্বাসের মাধ্যমে মৃত্যু বরণ করেন।মৃত্যু কালে তাঁর বয়স(৯৫)বছর।স্ত্রী,দুপুত্র ও পাঁচ কন্যা সন্তান সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
পৈতৃক নিবাস ও জন্মস্থান জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে।প্রায়ত পিতা তরণী মোহন সামন্ত ও মাতা সুরধ্বনী সামন্ত দম্পতির ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সকলের বড় সন্তান ছিলেন তিনি।মধ্যনগর সৎসঙ্গের সাবেক সভাপতি ও মধ্যনগর বাজারের অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় সুনামের সহিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন।যাঁর চিকিৎসায় বহু’অসাধ্য ও দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছেন অসংখ্য জনমানুষ।
বাল্যকাল থেকেই ভাটির দেশের গান ভাল লাগার মধ্যদিয়ে প্রবেশ করেন সঙ্গীত জগতে।রচনা করেছেন ধামাইল,বাউল,কবি,হুলি,টপ্পা,চাষীরগান,বাল্য বিবাহ বাণী,লীলা কীর্ত্তণ,ছড়া ও অগণিত গানের সুরকার ছিলেন।ধর্মসভা এবং রাজনৈতিক সভায় বক্তব্যেও ছিলেন পটু।হিন্দু সম্প্রদায়ের বিবাহে সাত পাকে প্রদক্ষীনের সময় জয়ধ্বনি গুলো তাঁর স্ব-রচিত।এরমধ্যে-১.শঙ্খ সিদুর,অক্ষয় হউক,২.দাম্পত্য জীবন,সুখের হউক,৩.সুখের ঘরে,বসত করে।
বামরাজনীতিতে জড়িত থাকার দায়ে যৌবনের শুরুতেই দেশের জরুরী অবস্থা এলেই কারাবন্দী থাকতে হয়েছে।প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাবন্দী ছিলেন তিনি।তখনকার ম্যালিটারী কতৃক সর্বোচ্চ শারীরিক নির্যাতিতও হয়েছেন।তাছাড়া ভাসানপানি আন্দোলনে অংশনেন।ভাসান পানি আন্দোলনের অগ্রনায়ক কমরেড প্রসূণ কান্তি রায়(বরুণ রায়)র উদ্দেশ্যে বলেছিলেন–
বরুণ শব্দে সাগরের দেবতা,বলে অভিধান।
ভাসান পানি আন্দোলনে,করেছে প্রমাণ।।
অরুণ কুমার সামন্ত যুবক বয়সে সাচনা গ্রামের তৎকালীন জমিদার পরিবার সুনামধন্য বাবু নিষি’রঞ্জন ঘোষ চৌধুরী’র প্রস্তাবনায় সাচনা বাজার রাজস্বের আওতায় যাওয়াকালের মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করছিলেন।
প্রয়াত বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত,কমরেড মনি সিংহ,কমরেড প্রসূণ কান্তি রায় বরুণ,মোজফ্ফর আহম্মেদ’র রাজনৈতিক সহচর ছিলেন তিনি।এছাড়াও দেশের উচ্চ পর্যায়ের অসংখ্য জনগুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাথে ছিল সু-সম্পর্ক বজায়।কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তাঁর অসংখ্য গান দেশ,বিদেশে প্রচলিত রয়েছে।বহুল প্রচলিত গানের মধ্যে-
মাতৃ সঙ্গীত
“জীবের আর’কেহ নাই মা’বিনে,
ত্বরিবারে ভব দূর্দিনে”।
ধামাইল-
”আমি কেন বা আসলাম’গো ভবে,
নারীর জনম লইয়া”।
সৎসঙ্গের ভাবধারায়-
“তঁরে ধরবে যদি আয়,
রাই সোহাগীর শ্যাম পাখি,
এসেছেন ধরায়”।তাছাড়া’ “গাঙুর” প্রকাশনীতে গবেষক সজল কান্তি সরকারের প্রচ্ছদ ও কবি অসীম সরকারের প্রকাশনায় দ্বীন অরুণ বান্দা গান ও কবিতায় “খোলে হৃদ মন্দিরের কপাট” নামক গ্রন্থের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি যেমন ছিলেন কথায় ও কাজে বিশ্বাসী।তেমনি রাজনৈতিক বাস্তবিক লেখনিতেও ছিলেন মিষ্টভাষী।কথা বার্তা চালচলন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন বেশ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক ছাত্র ও অনুসারী।বিদ্যা,বুদ্ধিমত্তা,বিচক্ষণতার দিকেও ছিলেন ডাঃঅরুণ কুমার সামন্ত (অনেকের মধ্যে একজন)অন্যতম মানুষ।১৩ই জুলাই রোববার প্রয়াত ডাঃঅরুণ কুমার সামন্তের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় মধ্যনগরস্থ নিজ বাড়ীতে পিন্ড দানের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধানুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
“হে প্রিয়,
এমোর সাধনা জীবনে,
আমার প্রাণের গীতি মালা,
পড়াব তোমার শ্রী’চরণে”-(অরুণ)