অ আ আবীর আকাশ:
(প্রবন্ধ)
রমনী মোহন খেয়া
সাহিত্যের বিস্তৃত অঙ্গনে কিছু কিছু নাম সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে মানুষের মননে গেঁথে থাকে। বাংলা ভাষার সাম্প্রতিক সাহিত্যে অ আ আবীর আকাশ এমনই এক নাম, যিনি বহুমাত্রিক পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন—একজন কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সাংবাদিক এবং সংস্কৃতি অনুরাগী হিসেবে। তাঁর সাহিত্যচর্চা যেমন গভীর চিন্তার প্রতিফলন, তেমনি তাঁর সাংবাদিকতা ও সামাজিক উপস্থিতি বর্তমান সমাজবাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এই প্রবন্ধে আমরা অ আ আবীর আকাশের জীবন, সাহিত্যভাবনা, লেখনী ও সমাজচেতনার বহুমুখী দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব।
—
জীবন ও গঠনের পটভূমি
অ আ আবীর আকাশ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উঠে আসা এক প্রতিশ্রুতিশীল সাহিত্যস্রষ্টা। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের অভিজ্ঞতা, গ্রামীণ জীবনের সান্নিধ্য এবং সমসাময়িক সামাজিক বাস্তবতার সাথে তাঁর গভীর সংযোগ তাঁর লেখায় বারবার ফিরে আসে। শিক্ষাজীবনে তিনি সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক অনুভব করেন এবং সেই আগ্রহই তাঁকে লেখালেখির জগতে নিয়ে আসে। সময়ের সাথে সাথে তাঁর কণ্ঠস্বর পাকা হতে থাকে—তাঁর শব্দ হয়ে ওঠে প্রতিবাদের, প্রেমের, আত্মনিবেদন ও মুক্তির প্রতীক।
—
সাহিত্যচর্চার সূচনা ও অগ্রযাত্রা
অ আ আবীর আকাশের সাহিত্যজীবন শুরু হয় কবিতা দিয়ে। তাঁর কবিতায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যেমন গুরুত্ব পায়, তেমনি থাকে সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি ও সময়ের নিখুঁত প্রতিবিম্ব। তাঁর কবিতা একদিকে যেমন আবেগপ্রবণ, অন্যদিকে তেমনি বুদ্ধিদীপ্ত। তাঁর লেখনীতে শব্দচয়ন এবং চিত্রকল্প ব্যবহারে এক ধরনের অভিনবত্ব লক্ষ্য করা যায় যা তাকে সমসাময়িক কবিদের ভিড়ে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়।
কবিতার পাশাপাশি তিনি প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও কলাম লেখায়ও দক্ষতা দেখিয়েছেন। তিনি যে বিষয়ই ধরুন না কেন—তা সামাজিক অন্যায় হোক, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন হোক কিংবা সংস্কৃতির অবক্ষয়—তাঁর কলম থাকে তীক্ষ্ণ ও সত্যনিষ্ঠ। তাঁর লেখাগুলোর একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো গভীর পর্যবেক্ষণ, নির্মোহ বিশ্লেষণ এবং সাহসী বক্তব্য।
—
কবিতায় প্রতিফলিত চেতনার রেখাচিত্র
অ আ আবীর আকাশের কবিতার প্রধান শক্তি হলো তার বিষয়বৈচিত্র্য ও চেতনার গভীরতা। প্রেম, প্রকৃতি, বিপ্লব, মৃত্যু, মানসিক যন্ত্রণা, লড়াই—সবই তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে। তাঁর লেখার মাঝে এক ধরনের রূপকধর্মিতা ও প্রতীকী ভাষা থাকে, যা পাঠককে ভাবনার গভীরে ডুব দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি কবিতায় তিনি লেখেন:
“একটা পিঁপড়ে গাঁথে আমার যন্ত্রণার ইতিহাস/ তুমি তাতে প্রেম খুঁজে পাও, আমি খুঁজে পাই শ্বাসরোধ।”
এই দু’টি লাইনের মধ্যেই প্রেম ও যন্ত্রণার দ্বৈততা, ব্যক্তিসত্তা ও সামাজিক বাস্তবতার টানাপোড়েন স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
—
প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ
প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক হিসেবে আবীর আকাশ নিজেকে শক্তিশালী ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রবন্ধে যেমন থাকে সমাজ বিশ্লেষণ, তেমনি ইতিহাস, দর্শন ও রাজনীতির ছাপ। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে, মুখ খুলেছেন সংখ্যালঘু নিপীড়ন, নারী অধিকার কিংবা ভাষার অপব্যবহার নিয়ে। তাঁর লেখা অনেক সময়েই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, আবার বহু পাঠককে আলোচনার পথে এনেছে।
“Abir Akash Journal” বা তাঁর ব্যক্তিগত লেখালেখির প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে একটি বিকল্প পাঠশালা, যেখানে পাঠক খুঁজে পান প্রথাবিরোধী চিন্তা, স্বরচিত কবিতা, এবং মুক্ত মত প্রকাশের স্পষ্ট প্রমাণ।
—
সাংবাদিকতা ও সামাজিক দায়িত্ব
অ আ আবীর আকাশ শুধু লেখক নন, বরং একজন সোচ্চার সাংবাদিকও। সাংবাদিকতা তাঁর কাছে শুধু তথ্য জানানোর উপায় নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তিনি গ্রামীণ জীবনের খবর যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়েও কলম ধরেছেন। অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি নিজের জায়গা থেকে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।
তার রিপোর্টিংয়ের ধরন বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, তিনি তথ্য উপস্থাপনে যতটা যত্নবান, ততটাই মানবিক একজন চিন্তাশীল মানুষ। তাঁর প্রতিবেদনগুলো সমাজের প্রান্তিক মানুষের কথা বলে, যা গণমাধ্যমে খুব কমই উঠে আসে।
—
একজন সংস্কৃতি অনুরাগী
আবীর আকাশ কেবল লেখক বা সাংবাদিক নন, তিনি একাধারে একজন সংস্কৃতিসেবী। তিনি নিয়মিতভাবে সাহিত্যসভা, আবৃত্তি, মুক্ত আলোচনা, ও কবিতা পাঠের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন এবং তরুণ লেখকদের উৎসাহ দেন। নতুন প্রজন্মের লেখক ও কবিদের মধ্যে তিনি এক ধরনের প্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
—
সমালোচনা ও গ্রহণযোগ্যতা
একজন সাহসী ও স্পষ্টবাদী লেখক হিসেবে অ আ আবীর আকাশ কখনো কখনো সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছেন। তবে এই সমালোচনাই প্রমাণ করে, তিনি পাঠকের চিন্তায় আলোড়ন তুলতে পেরেছেন। অনেকেই তাঁর লেখাকে “প্রতিবাদী কাব্যধারা”র অন্তর্গত বলেন, আবার অনেকে মনে করেন, তাঁর লেখায় রয়েছে “নতুন ধারার রূপান্তরবাদ”।
তবে সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে তাঁর লেখনী একথা স্পষ্ট করে দেয়—তিনি আপসহীন সত্যকথনেই বিশ্বাসী।
—
Conclusion
অ আ আবীর আকাশ বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতার একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি নিজেকে বেঁধে রাখেননি কোনো নির্দিষ্ট ঘরানায়। তাঁর কবিতা যেমন হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তেমনি তাঁর প্রবন্ধ পাঠককে চিন্তার উর্বর মাটি দেয়। তিনি বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করেছেন মানুষের কথা বলার হাতিয়ার হিসেবে—তাতে আছে প্রতিবাদ, প্রেম, প্রতিবিম্ব, আর প্রবাহ। তাঁর কলম আজও চলছে, চলবে—কারণ সাহিত্যের পথিকেরা কখনো থেমে থাকে না।