জ্যোষ্ঠ্যের রোদ। ভ্যাপসা গরম। আছে ঝড়ের শঙ্কা। বিশ মিনিটের নোটিশে উত্তর আকাশ কালো হয়ে তুমুল ঝড় সাথে বৃষ্টি শুরু হয় এসময়। একটা খোলা ট্রাকে চট্টগ্রামের পথে প্রান্তরে ঘুরছেন ডা. তাসনিম জারা। কয়েকদিন আগেও যে মেয়েটির সহবা*স শেখানোর ভিডিও নিয়ে আমরা তুমুল হইচই করলাম। হইচই করতে দেখলাম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অতি শিক্ষিত এক নির্মাতাকেও।
তার আগে তাসনিম জারার দুই একটা ভিডিও সামনে এসেছিল। দরকার মনে হলে দেখেছি না হলে এড়িয়ে গেছি। ফেসবুকে তুলোধোনা করতে দেখে জারার ইউটিউব চ্যানেলে ঢুকলাম। পপুলার ক্যাটাগরিতে দুই নাম্বারে আছে ভিডিওটা। থান্বনেইল দেখে থমকে গেলাম। থাম্বনেইলে দেখলাম- “গর্ভধারণের জন্য সহorসের নিয়মগুলো কী কী?” অথচ আমাদের জ্ঞানপাপী ফেসবুকাররা বানিয়ে ফেলল, তাসনিম জারা আমাদের সহবা*স শেখাচ্ছে।
২২ মিলিয়ন ভিউজ। তিন বছর আগে আপলোড করা ভিডিও দেখেছেন দুই কোটি বিশ লাখ মানুষ। ত্রিশ হাজার লাইক, পাঁচ হাজারের উপরে কমেন্ট। ভিডিওর শুরুতে তিনি দর্শকদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ভিডিওটি বানিয়েছেন তার প্রমাণও দিয়েছেন।
যারা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই ওই দৃশ্যটার কথা মনে আছে? ফারুকী তিশা দম্পতির সন্তান হচ্ছে না। তারা গেছেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার জানাচ্ছে কোন সময় সহবা*স করলে গর্ভধারণ হয়। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে ফারুকী তার স্ত্রীকে বলেন, ‘আমরা মরা গাছে পানি দিচ্ছি আর ভাবছি গাছে ফুল আসে না কেন?’
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী দেশের আধুনিকতম মানুষদের একজন। তিশাও। তাদেরও ডাক্তারের থেকে জানতে হয়েছে গর্ভধারণের জন্য সহorসের নিয়মগুলো। অথচ সন্তান জন্মদানের মতো শাশ্বত সত্য ও মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা শেখানো মেয়েটিকেই আমরা অশ্বলীলতা ছড়ানোর অভিযোগ আনলাম। আদালত থেকে উকিল নোটিশ পর্যন্ত দিলাম। অবস্থা যেন, তাসনিম জারার পেছনে লাগা মানুষগুলো সহবা*স ছাড়াই জন্ম নিয়েছে।
তাসনিম জারা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছিলেন। মধ্যবিত্ত তো বটেই, উচ্চবিত্ত বাঙালিদের জন্য যে জীবনের স্বপ্ন দেখাই দুঃসাহসিক সেই জীবন যাপন করছিলেন ডা. তাসনিম জারা। অর্থ বিত্ত যশ, কী ছিল না তার? বিলাসী জীবন কাটাতে পারতেন অনায়াসেই।
বর্ষা বিপ্লব তরুণদের মনোজগৎ তছনছ করে দিয়েছে। সেই তছনছ হওয়া মনোজগৎ তাসনিম জারাকে টেনে এনেছে দেশে। শুধু দেশে টেনে এনেই শান্ত হয়নি। জ্যোষ্ঠ্যের গরমে তাকে নিয়ে গেছে ছাদখোলা ট্রাকে। মানুষের কাছে। রোদে পোড়া মুখ হাসি ফোটাচ্ছে সাধারণ মানুষের ঠোঁটে।
হাসনাত আব্দুল্লাহরই বা কি ছিল না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছেন। অনলাইন কোর্স করিয়েই কাড়ি কাড়ি টাকা কামাচ্ছেন। শিক্ষক হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়।
বর্ষা বিপ্লব প্রথমে হাসনাতকে দাঁড় করালো পুলিশের সামনে। এরপর রাস্তায়। চট্টগ্রামের পথে প্রান্তরে ঘুরছেন তিনিও। সাধারণ মানুষ, বাবার বয়সী মানুষ তাকে জড়িয়ে ধরছে। নতুন করে মুক্তির পথ পাচ্ছেন।
আমাদের রাজনীতি দুষ্টুর হাতে। মানুষকে শোষণের প্রধান হাতিয়ার। আমরা বারবার শাসকের সামনে দাঁড়াচ্ছি হাতে প্রাণ নিয়ে। তারপর আবার দাঁড়াচ্ছি। কারণ কিছুই বদলাচ্ছে না।
আমাদের বাবারা দাঁড়িয়েছেন। আমরা দাঁড়ালাম। আমাদের সন্তানেরাও দাঁড়াবে। আমরা কেবল মরব?
‘এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। যুগের পর যুগ শুধু অভিনেতা বদলানো একই সিনেমা আমরা দেখব না। আমরা নতুন সিনেমা বানানো। নতুন শিল্পী। নতুন গল্প। যেই সিনেমা মানুষের প্রকৃত অধিকার ফিরিয়ে আনবে।’ এই ভাবনাটা হাসনাত জারাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। অথচ আমরা গভীর ঘুমে। উপর দিয়ে হয়ে যায় যাক ভাব নিয়ে নাক ডাকছি।
আমাদের ঘুম ভাঙতে হবে। গা ঝারা দিয়ে উঠতে হবে। ঘুম ভাঙতে হবে রাজনীতিবিদদেরও। ঘুমন্ত বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদদের ইতিমধ্যেই সর্বনাশ করতে শুরু করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ তাসনিম জারারা।
যেই গতিতে ওরা চলছে, খুব দ্রুতই টেন্স শেখানো হাসনাত আব্দুল্লাহ আর সহবাস শেখানো তাসনিম জারা আমাদের রাজনীতি শেখাবে। সেই ক্লাসে ছাত্রের অভাব হবে বলে মনে হচ্ছে না।
জাতি প্রস্তুত হচ্ছে। তারা সেই সকালটা দেখতে চায়, যেই সকালে শুধু আলো, রেডিয়েশন নেই।
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ
যুগ্ম আহ্বায়ক
জাতীয় যুবশক্তি, এনসিপি