Staff Correspondent:
‘মব’ সৃষ্টি করে নৈরাজ্য এবং একের পর এক নৃশংসতার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সারা দেশে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
চুরি, ছিনতাই, মব সহিংসতা-সহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির বিবেচনায় সরকার যে কোনো সময় চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে পারে।’
চিরুনি অভিযান কখন শুরু হতে পারে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন থেকেই।’ তিনি সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
বৈঠকে সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি; মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা; চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজদের দমন; নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ; মাদকবিরোধী কার্যক্রম এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক দুঃখজনক ঘটনা, সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে এটি দেখছে। যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।’
গত বুধবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন সংগঠন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সংশ্লিষ্টতা আছে। এ তিন সংগঠন তাদের পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে।
তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, যাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর। তারা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় জড়িত ১৯ জনের মধ্যে সাতজনকে র্যাব, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে ছয়জনকে ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারের পরও কেউ জামিন পাচ্ছে—এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি আইন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধী অপরাধীই। সে যে দলেরই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’
সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ার পেছনে সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ও নৈতিক স্খলনকে দায়ী করেন উপদেষ্টা। তিনি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানান।
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চাই। নির্বাচন কমিশন কবে তারিখ দেবে, সেটির ওপর নির্ভর করছে।’