সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়, প্রেমের সম্পর্ক এবং তার পরিণতিতে ভয়াবহ এক অভিযোগ—অপহরণ, ধর্ষণ O নির্যাতনের মামলায় সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ Gave আদালত। মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ এই আদেশ দেন।
আদালতে নাটকীয় পরিবেশ
নোবেলকে দুপুর ২টা ৪১ মিনিটে আদালতের হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয়। মাথায় হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং পেছনে হাতকড়া—এই অবস্থায় তিনি আদালতে উপস্থিত হন। ২টা ৫০ মিনিটে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হয়, এবং তার এক হাত কাঠগড়ার রেলিংয়ে আটকানো হয়। ২৬ মিনিট ধরে সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। গরমে অস্বস্তি লাগার কথা বললেও পুলিশ তার জ্যাকেট খুলতে দেয়নি।
শুনানিতে কী ঘটেছে?
নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন দাবি করেন, বাদী আসলে তার স্ত্রী এবং তারা একই বাসায় থাকছিলেন। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে মামলা হয়েছে এবং তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করতে চান। তবে কাবিননামা দেখাতে পারেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, বাদী একজন ইডেন কলেজের ছাত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের পর গত বছরের ১২ নভেম্বর তাকে ডেমরার বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে নোবেল ও তার সহযোগীরা তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতন করে। মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়, ভেঙে ফেলা হয়, এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।
ঘটনার বিস্তারিত পটভূমি
মামলায় অভিযোগ করা হয়,
- নোবেল ১২ নভেম্বর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ডেমরায় নিজের বাসায় নিয়ে যান
- সেখানেই তিনি ও তার অজ্ঞাতনামা ২-৩ সহযোগী তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন
- মোবাইল ভেঙে ফেলেন ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করেন
- একাধিকবার মারধর করেন এবং ভয় দেখান
- সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুটি ধরে টেনে অপর কক্ষে নিয়ে আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে
- ১৯ মে ভিডিও ভাইরাল হলে তার পরিবার তাকে চিনে ফেলে এবং পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে
আদালতের রায়
সাড়ে ৩টার দিকে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর তার হাতকড়া খোলা হয়, পুনরায় পেছনে হাতকড়া পরিয়ে হেলমেট পরিয়ে পুলিশি পাহারায় তাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া
নোবেল এর আগেও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন, তবে এবার ঘটনা আরও গুরুতর। মামলাটি এখন গোটা দেশের নজরে এবং তদন্ত চলমান। সমাজে তারকারা যে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন—এটাই প্রত্যাশা। কিন্তু এই ঘটনায় সেই প্রত্যাশা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে।
ঘটনার গভীরতা, আদালতের প্রক্রিয়া ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে এটি এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত মামলাগুলোর একটি। তদন্ত ও বিচারকাজ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।