সউদ আব্দুল্লা, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের বিরুদ্ধে থানায় হামলা, পুলিশ সদস্যদের আহত করা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বাবা মো.মাইনুর রহমান।
শুক্রবার (২১ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে ক্ষেতলাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন,রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ঈর্ষান্বিত হয়ে তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
১৮ মার্চ বগুড়ার শাহজাহানপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ক্ষেতলালের মিজানুর রহমানের কাছ থেকে জমি কেনার জন্য ক্ষেতলাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আসেন।অভিযোগ রয়েছে, এ সময় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী জমির ক্রেতার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন।
জমির ক্রেতা তোফাজ্জল হোসেন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বিএনপি কর্মীরা তোফাজ্জলের আত্মীয়দের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত তোফাজ্জলকে উদ্ধার করে প্রথমে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় আহত তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করতে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সরকার জানান, চাঁদাবাজির মামলার খবর পেয়ে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক পার্থের নেতৃত্বে শতাধিক নেতা-কর্মী থানায় যান।একপর্যায়ে তারা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এবং ভিড় জমতে থাকে।
পুলিশের দাবি,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে শুরু করলে মেহেদী আশিক পার্থ তা বাধা দেন। পরে উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা থানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে কিছু কর্মী থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, ডিবি পুলিশ এবং পাশের কালাই থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওইদিন ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে এবং পরে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী আশিক পার্থের বাবা মো. মাইনুর রহমান দাবি করেন, তার ছেলে রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় একই দলের প্রতিপক্ষরা ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করেছে।
তিনি বলেন, “আমার ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। অথচ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করিয়েছে। সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সমর্থিত বিএনপি নেতা খুরশিদ আলম চৌধুরীসহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করেছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাই।”
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা খুরশিদ আলম চৌধুরী বলেন, “থানায় হামলা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এখানে আমাকে এবং অন্যদের মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে। আসলে বাপ-বেটা মিলে আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মাহবুবুর রহমান সরকার জানান, এ ঘটনায় থানার এসআই সঞ্চয় কুমার বর্মণ বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।অন্যদিকে, চাঁদাবাজির অভিযোগে তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি আরও জানান, “ঘটনার পর থেকে পুলিশি অভিযান চলছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”