অংবাচিং মারমা, রুমা প্রতিনিধি (বান্দরবান):
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বন বিভাগের ভেতরে চরম দায়িত্বহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সদরের গাছ বিভাগের কেরানী মো. জাহাঙ্গীর সরকারি ফরেস্টার ইউনিফর্ম পরে নিয়মিতভাবে সরকারি বনাঞ্চলে গাছ মাপছেন, তালিকাভুক্ত করছেন এবং মূল্য নির্ধারণের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করছেন—যা একেবারেই বেআইনি ও সরকারি বিধির পরিপন্থী।
কেরানী সেজে ‘ফরেস্টার’—বন বিভাগের ছত্রছায়ায়?
স্থানীয়দের অভিযোগ, জাহাঙ্গীর নামে এই কেরানী কোনো পেশাগত বন প্রশিক্ষণ ছাড়াই ‘বিট অফিসার’ সেজে নিয়মিত বনাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে গাছ মাপছেন এবং সরকারি সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করছেন। তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবতা বন বিভাগে শক্তিশালী একটি দুর্নীতিবাজ চক্রের অস্তিত্বের আভাস দিচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাহাঙ্গীরকে প্রায়ই ফরেস্টারদের নির্ধারিত পোশাক পরে সরকারি দায়িত্ব পালনে দেখা যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেছেন, “আমি ফরেস্টার ইউনিফর্ম পরেছি ঠিকই, তবে কে দিয়েছে—তা বলা যাবে না।”
চেয়ারম্যানকেও হুমকি, কাঠ ব্যবসায়ী চক্র সক্রিয়
এদিকে, রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অবৈধ গাছ পাচার নিয়ে কথা বলায় কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা ও সাধারণ সম্পাদক পিপলু মারমা তাকে হত্যার হুমকি দেন। এমনকি গাছের গাড়ি চাপিয়ে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “তারা বলেছে, আমাকে মেরে ফেলার পর বান্দরবান থেকে টাকা নিয়ে সব সামাল দেবে।”
চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমার দাবি, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ কাঠ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার সহায়তায় জবাবদিহির বাইরে অবস্থান করছে।
পরিবেশ রক্ষায় তদন্ত ও শাস্তির দাবি
সচেতন নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয় নেতারা বলছেন, “এই অনিয়ম ও দুর্নীতির জালে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পাহাড়ি বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে।”
তারা দ্রুত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নিরপেক্ষ তদন্ত ও অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Administration response
এ বিষয়ে পলি রেঞ্জ কর্মকর্তা অসীম বাড়ি বলেন, “কেরানীর ফরেস্টার পোশাক পরিধান সম্পর্কে অবগত হয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”