গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলদী নূরে মদিনা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় চরম অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১০ বছরের এক শিক্ষার্থী। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মুফতি জাকারিয়া একটি বস্তায় শিশুটিকে পুরে খোলা ছাদে দীর্ঘ সময় ফেলে রাখেন, যেখানে তার মাথা শুধু বাইরে ছিল। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
শিশুটির নাম আবু বকর সিদ্দিকী। সে কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী দাওদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেনের ছেলে। প্রতিদিনের মতো সে মাদ্রাসায় অবস্থান করছিল। শনিবার সকালে কোনো এক বিষয়ে সামান্য ভুলের কারণে শিক্ষক জাকারিয়া প্রথমে তাকে মারধর করেন। এরপর শিশুটি কাঁদতে শুরু করলে এবং পরিবারকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে, শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে আরও ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি একটি পুরাতন চটের বস্তায় শিশুটির শরীর আটকে রেখে কেবল মাথা বাইরে রেখে তাকে রেলিংবিহীন ছাদের ওপর ফেলে রাখেন। যাতে কেউ তাকে দেখতে বা উদ্ধার করতে না পারে, সে উদ্দেশ্যে মাদ্রাসার প্রধান গেটও বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশু আবু বকর এই অবর্ণনীয় অবস্থায় আটকে ছিল। সেসময় প্রস্রাব ও পায়খানা করে ফেললেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
এক সহপাঠী জানালা দিয়ে ঘটনাটি দেখে কোনোভাবে পালিয়ে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়। এরপর স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষক জাকারিয়া আগে থেকেই শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন, তবে এবারের ঘটনা ছিল এতটাই বর্বর যে পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়।
শিশুটির বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, “আমার ছেলে ছোট, কোনো ভুল করলেও এভাবে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কারও নেই। আমি থানায় অভিযোগ করেছি। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক জাকারিয়া পুলিশ হেফাজতে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অভিযুক্ত শিক্ষক স্বীকার করেছেন যে, শিশুটি পালাতে না পারে, এজন্যই বস্তায় পুরে ছাদে ফেলে রাখা হয়েছিল।
এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও মাদ্রাসাগুলোতে শিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সচেতন মহল দ্রুত বিচার ও কঠোর আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।