দেওয়ান মাসুকুর রহমান :
বিশেষ প্রতিনিধি | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২০ জুলাই ২০২৫ : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জলবায়ু পরিবর্তন ও জীব বৈচিত্র্য বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২০ জুলাই ২০২৫) শ্রীমঙ্গল শহরের হোটেল গ্র্যান্ড তাজের হলরুমে বিপনেট এর উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কেএমকেএস-এর কর্মসূচী সমন্বয়কারী মিঠুন কুমার উরাও-এর সঞ্চালনায় ও খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সভাপতি ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বিপনেট সদস্য জিডিশন প্রধান সুছিয়াং করডরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালেয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মৃনাল কান্তি ত্রিপুরা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী ও বিপনেট সদস্য পিলাহ ফতমী, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অনিল জয়, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা, মৌলভীবাজার চা জনগোষ্ঠী আদিবাসাী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, আলিয়াছড়া পুঞ্জির প্রতিনিধি সদস্য রোনাল্ড টি আমফ্লাগ, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসাী ফোরামের মহাসচিব প্রদীপ কুমার সিনহা, মনিপুরী যুবনেতা ও সাংবাদিক নির্মল এস পলাশ, নিঙ্গুমবাম শংকর, আদিবাসী মুন্ডা জনগোষ্ঠীর সভাপতি লক্ষ্মণ মুন্ডা, সাঁওতাল যুবনেতা স্বপন মুর্মু সহ বিভিন্ন চা বাগান ও অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যুব প্রতিনিধি। কর্মশালায় বিভিন্ন উপজেলার ২৫ জন নেতৃস্থানীয়রা অংশগ্রহণ করেন।
এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা, সিনিয়র সাংবাদিক, গবেষক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান এবং উভয়ই একে অপরের উপর প্রভাব ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে, আবার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে জলবায়ু পরিবর্তন আরও খারাপ হতে পারে। আমাদের করণীয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে পদক্ষেপ নেয়া এবং একইসঙ্গে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মনোযোগ দেওয়া।”
জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে:
তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া (যেমন: বন্যা, খরা) ইত্যাদি কারণে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে এবং বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ছে।
জীববৈচিত্র্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, বাস্তুতন্ত্র (ecosystems) কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, বনভূমি এবং জলাভূমি কার্বন সংরক্ষণে সহায়ক। এদের ধ্বংস হলে কার্বন নিঃসরণ বাড়ে এবং জলবায়ু পরিবর্তন আরও তীব্র হতে পারে।
খাদ্য উৎপাদন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণে খাদ্য উৎপাদনও প্রভাবিত হতে পারে, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে।
আর তাই আমাদের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো। কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য বনভূমি ধ্বংস করা বন্ধ করা এবং বৃক্ষরোপণ করা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে দূষণ কমানো। শিল্পকারখানা থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সংরক্ষিত এলাকা (protected areas) তৈরি করা এবং সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা। বিভিন্ন প্রজাতি এবং তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা। দূষণ কমানো এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা। স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি বলেন, জলবায়ু-সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা এবং টেকসই কৃষিকাজ করা। খাদ্য অপচয় হ্রাস করা।
বৈশ্বিক সহযোগিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা। জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মোকাবেলা করা একটি সম্মিলিত দায়িত্ব। ব্যক্তিগত এবং সম্মিলিত উভয় পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি।