রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে চলমান একটি প্রকল্পের সময়সীমা এবং ব্যয় আরও বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় এই প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দুই বছর, যা এখন শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে।
শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, এই অতিরিক্ত অর্থায়নের পুরোটা দেবে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
তবে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পে আন্তর্জাতিক অনুদান পাওয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ড. মাহমুদ বলেন, “বিশ্বব্যাংক থেকে আরও দুই বছরের জন্য অনুদান পাওয়া সম্ভব। তবে জাতিসংঘের আওতায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সহায়তা—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতির কারণে—নিয়মিত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।”
আজকের একনেক সভায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে—সামাজিক নিরাপত্তা খাত সংশ্লিষ্ট ‘স্ট্রেনদেনিং সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর ইমপ্রুভড রেজিলিয়েন্স, ইনক্লুশন অ্যান্ড টার্গেটিং’ নামের প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০৪ কোটি টাকা।
এই প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার প্রকৃত উপকারভোগীরা অনেক সময়ই বাদ পড়ে যান, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কারণে অনেকে অযৌক্তিকভাবে তালিকাভুক্ত হন। তাঁর মতে, এ ধরনের অনিয়ম কমাতে পারলে প্রকৃত উপকারভোগীদের ভাতা দ্বিগুণ করা সম্ভব হতো।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহজ শর্তে বড় ঋণ পেতে হলে অনেক সময় ছোট ঋণের সঙ্গে পরামর্শক নিয়োগের শর্ত মানতে হয়, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
আজকের সভায় আরও একটি বড় প্রকল্প পাস হয়েছে — চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পটি ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০৩১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কর্ণফুলী নদী ও আশপাশের এলাকায় এই প্রকল্পের আওতায় জাহাজ চলাচলের উপযোগী চ্যানেল, ব্রেক ওয়াটার, রেল ও সড়ক সংযোগসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পে মোট চারটি বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে দুটি হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (PPP) ভিত্তিতে।
সব মিলিয়ে আজকের একনেক সভায় মোট ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে, ৩ হাজার ১ কোটি টাকা দেবে সরকার এবং বাকি অর্থ সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা।