অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সমাজে বৈষম্য বাড়াবে এবং ‘জুলাই আন্দোলনের’ মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক—এমন মন্তব্য করেছে দেশের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালে রাজধানীতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “যদি কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়, তবে মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য আবাসন কেনা আরও দুরূহ হয়ে উঠবে। এর ফলে সমাজে বৈষম্য তীব্রতর হবে। অথচ বাজেটে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে। বাস্তবে প্রস্তাবিত এই ব্যবস্থা সেই প্রত্যয়ের বিপরীতমুখী।”
ড. ফাহমিদা আরও বলেন, বাজেটে বলা হয়েছে, কেউ চাইলে ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে গিয়ে অপ্রদর্শিত আয় দেখিয়ে কিছুটা অতিরিক্ত কর দিয়ে তা বৈধ করতে পারবে। এ ধরনের ব্যবস্থাকে সিপিডি দীর্ঘদিন ধরে নৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য বলে বিবেচনা করে এসেছে। “এটি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং কর ব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে। ফলে ন্যায়ের বোধ এবং সামাজিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ে,”—বলেন তিনি।
আবাসন খাতের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কালো টাকার ব্যবহারকে চিহ্নিত করেন ড. ফাহমিদা। তাঁর মতে, এই খাতে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ প্রবেশ করায় সম্পদের মূল্য কৃত্রিমভাবে বেড়ে যায়। এর ফলে যারা বৈধ উপায়ে আয় করেন, তাদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, “বাজেটে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, আবার সেখানে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে—এটা এক ধরনের দ্বিচারিতা। আমরা এই প্রস্তাব বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ের ‘জুলাই আন্দোলন’ ছিল একটি বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলন, যা আয়-সম্পদ-সুযোগের ন্যায্য বণ্টনের দাবি তুলে ধরে। সিপিডির মতে, বর্তমান বাজেট প্রস্তাব সেই আদর্শের সঙ্গে খাপ খায় না।