ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রেশ বাংলাদেশ শেয়ারবাজারেও পড়েছে প্রবলভাবে। বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে একদিনেই ঘটে গেল বড় ধরনের দরপতন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দিনের শেষে নেমে এসেছে ৪৮০২ পয়েন্টে, যা গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পতনের পরিমাণ প্রায় ১৫০ পয়েন্ট, শতাংশ হিসেবে ৩ শতাংশের বেশি।
দিনভর লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাজারের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিক্রি চাপ প্রবল ছিল। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই সূচক পড়ে যায় প্রায় ১০০ পয়েন্ট। এরপর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও শেষ দিকে আবারও টানা পতনে পড়ে বাজার।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৯টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৯টির দর বেড়েছে, অপরিবর্তিত ছিল ৫টি, আর দর কমেছে ৩৮৫টির, অর্থাৎ ৯৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারে দরপতন ঘটেছে।
সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে শরিয়াহ সূচকে — ৩.৮৪ শতাংশ কমে যা দাঁড়িয়েছে ১০৪৭ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচকও কমেছে ৪০ পয়েন্ট বা ২.১৯ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকেই আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন, অথচ ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এর ফলে বাজারে চাহিদার ভারসাম্য ভেঙে পড়ে এবং দরপতন ঘটে।
প্রাইম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী মঈন আল কাশেম বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলোর যুদ্ধ পরিস্থিতি আমাদের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও একই ধরনের প্রভাব পড়েছিল।”
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, বাজারে স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছিল না, অংশগ্রহণও কমে গেছে। ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ কৃত্রিমভাবে বাজারে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলেও সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারত কাশ্মীর অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে পাল্টা হামলায় জবাব দেয় পাকিস্তান। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের এমন মুখোমুখি অবস্থান গোটা অঞ্চলজুড়েই অস্থিরতা তৈরি করেছে, যার তাৎক্ষণিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারে।
লেনদেনের দিক থেকেও দেখা গেছে মন্দা—মঙ্গলবারের তুলনায় ৩৩ কোটি টাকা কম লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে মাত্র ৫১৬ কোটি টাকা।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে বাজারে আরও বড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।