রেশম শিল্প বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভাবনাময় খাত, যার ইতিহাস মোগল আমল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই শিল্প শুধু শৈল্পিক দিক থেকেই নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক বিশাল ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ২০২১ সালে রেশম ‘ভৌগোলিক নির্দেশক’ বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বেড়েছে অনেক গুণ। বর্তমানে রাজশাহীতে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক সরাসরি রেশম শিল্পে যুক্ত রয়েছে, আর সারা দেশে এই সংখ্যাটি ৫ লাখেরও বেশি। রাজশাহীর ৬০-৭০টি সক্রিয় সিল্ক কারখানায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নানাবিধ রেশমজাত পণ্য।
রেশম উৎপাদনের তিনটি ধাপ রয়েছে: প্রথমত তুত গাছের চাষ, দ্বিতীয়ত রেশম পোকা পালন এবং তৃতীয়ত রেশম গুটি থেকে সুতা সংগ্রহ ও কাপড় উৎপাদন। প্রথম দুটি ধাপ কৃষিভিত্তিক হলেও শেষ ধাপটি সম্পূর্ণ শিল্পভিত্তিক। একটি রেশম গুটি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার অবিন্যস্ত সুতা পাওয়া যায় এবং প্রতি কেজি রেশম সুতার বাজারমূল্য ৭ হাজার টাকা। যদিও দেশে রেশম উৎপাদিত হয়, তবে উন্নত মানের রেশম সুতা এখনও আমদানি করতে হয় চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, জাপান ও রুসানিয়া থেকে।
রেশমজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে সুঁই সুতাকাতান, মুসলিম, স্টিজকটি সিল্ক, জয়শ্রী, সিল্ককাতান, ওয়াটার কাতান, জামদানি কার্তান, বরকাতান, ধুপিয়ানা, শাড়ি, থ্রিপিস, ওড়না, পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, স্কার্ফ ও বলাকা। এসব পণ্যের দাম জাতভেদে ভিন্ন ভিন্ন—শাড়ির মূল্য শুরু হয় ২ হাজার টাকা থেকে, থ্রি পিস ৪ হাজার ৫শ’ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং পাঞ্জাবি পাওয়া যায় ২-৩ হাজার টাকার মধ্যেই। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে এই শিল্পে ৬০-৭০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
যদি সরকার রেশম শিল্পে আরও আধুনিকায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করে, তবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও বিপুল পরিমাণে রপ্তানি করা সম্ভব। এটি শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় উৎস হয়ে উঠবে না, একই সঙ্গে দেশের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং বেকারত্বও কমাবে। সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা নিয়ে এগোতে পারলে রেশম শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারবে।