বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক খাতের উন্নয়নে বড় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে এলো বিশ্বব্যাংক। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করার লক্ষ্যে সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে—যার মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা।
এই অর্থে বাস্তবায়িত হবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার।
প্রথম প্রকল্পটি ‘বে-টার্মিনাল মেরিন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’, যার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার। এই প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে, যাতে বড় আকারের জাহাজ চলাচল করতে পারে। ফলে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ কমবে, বাড়বে রপ্তানি সক্ষমতা। বিশ্বব্যাংকের মতে, এই আধুনিকায়নের ফলে প্রতিদিন গড়ে এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে এবং নারীদের জন্যও সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
দ্বিতীয় প্রকল্প ‘SSPIRIT’ (Strengthening Social Protection for Improved Resilience, Inclusion and Targeting), যাতে ২০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হবে। দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, ঋণ সহায়তা এবং পেশাগত পরামর্শের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
ইআরডি সচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী এ চুক্তিকে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের দীর্ঘদিনের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই অংশীদারিত্ব আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।”
বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি গেইল মার্টিন বলেন, “বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। তাদের জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। এই বিনিয়োগ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বিশ্বব্যাংকের এই অর্থায়ন দেশের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।