দেশে জ্বালানি গ্যাসের সংকট ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর ফলে অনেক শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে বা স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে চালু থাকা কারখানাগুলোও প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়ায় নানা সমস্যায় ভুগছে।
গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ ঘাটতি সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দেশে দৈনিক ৪১০ থেকে ৪২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ এক দশকের বেশি সময় ধরে চাহিদার তুলনায় কম। শিল্পখাত সচল রাখতে দৈনিক ৩৫০-৩৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হলেও বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২৭০ কোটি ঘনফুট।
গত বুধবার সরবরাহ ছিল ২৮২ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট, যার মধ্যে প্রায় ৯৮ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট এলএনজি থেকে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ২০০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব নয় এবং এলএনজি টার্মিনাল থেকেও দৈনিক ১০৮ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা কঠিন। আর্থিক সংকট ও সরবরাহকারীদের বকেয়া বিলের কারণে মোট উৎপাদনক্ষমতার চেয়েও কম গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে।
শিল্পখাতে ব্যাপক প্রভাব গ্যাস সংকটের ফলে দেশের সার, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, নিট, ইস্পাত ও সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও সাভারের শিল্পকারখানাগুলো গ্যাস সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা জানান, সিরামিক কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে, পোশাক খাতে ৩০-৩৫ শতাংশ এবং স্টিল কারখানায় ২৫-৩০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। বিকল্প হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করায় খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব এ সংকটের মধ্যেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ১৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা থাকলেও নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এটি ৭৫ টাকা ৭২ পয়সায় উন্নীত করা হতে পারে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গ্যাসের মূল্য স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
সমাধানের উপায় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন গ্যাস কূপ খনন, এলএনজি টার্মিনাল সম্প্রসারণ এবং বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে। পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করাও জরুরি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, গ্যাস সংকট দ্রুত সমাধান করা না গেলে দেশের শিল্পখাত আরও সংকটের মুখে পড়তে পারে, যা অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।