ঢাকা, ৩ মার্চ ২০২৫ – নোমান গ্রুপ, বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান, যার শুরু হয়েছিল আরটেক্স ফ্যাব্রিকস এবং মরিয়ম টেক্সটাইল দিয়ে, আজ তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালে শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবং তার কঠোর পরিশ্রম ও পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বর্তমানে নোমান গ্রুপ একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে।
নুরুল ইসলামের পথচলা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার নিজ গ্রাম থেকে। স্বাধীনতার আগে পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি মেসে বসবাস শুরু করেন। সেখানে কমিশনের ভিত্তিতে পোশাক বিক্রির কাজ শুরু করেছিলেন। তার প্রথম মাসের আয় ছিল ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজ উদ্যোগে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করতে থাকেন এবং ব্যবসা বাড়াতে থাকেন।
১৯৭৬ সালে, তৈয়ব আশরাফ টেক্সটাইল মিলস প্রতিষ্ঠানটি তিনি ভাড়ায় নেন এবং সেখানে মশারি ও গেঞ্জির কাপড় তৈরি করতে থাকেন। কিছুদিন পর ঋণ আদায়ের জন্য এই কারখানাগুলি নিলামে তুলে দেয় ব্যাংক। নুরুল ইসলাম সেগুলি যন্ত্রপাতিসহ কিনে নেন এবং মাত্র ২২ জন শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন শুরু করেন। নিজের হাতে নকশা, কাঁচামাল কেনা, উৎপাদন—সবকিছুই শুরু করেন। বর্তমানে তার ছেলে এএসএম রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির ভার গ্রহণ করেছেন, তবে নুরুল ইসলাম এখনও উপদেষ্টা হিসেবে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেন।
নোমান গ্রুপের যাত্রা ১৯৮৭ সালে শুরু হয় এবং জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে, যখন তারা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রফতানি শুরু করে। বর্তমানে তারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলির জন্য পোশাক রফতানি করে থাকে, যেমন আইকেইএ, টার্গেট, জিএপি, জেসি পেনি, টেস্কো, জারা, ম্যাঙ্গো, নাইকী, ওয়ালমার্ট, জিসিসি পেনি, ডিজনি এবং আরও অনেক।

নোমান গ্রুপের সাফল্যের পিছনে একটি বড় কারণ হল তাদের পণ্যের গুণগত মান এবং রফতানি বাজারের প্রতি অবিচল মনোযোগ। তাদের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিছানার চাদর, বেডশিট এবং অন্যান্য হোম টেক্সটাইল পণ্য। ২০০০ সালে তাদের প্রথম রফতানি ছিল ৬৫ লাখ ডলারের বিছানার চাদর।
নোমান গ্রুপের ৩২টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০,০০০ শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন এবং তাদের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার।
এটি একটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান, যা এখনো গুণগত মানের দিকে বিশেষ নজর দেয় এবং রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে শীর্ষ রফতানিকারক হিসেবে নিজেদের স্বীকৃতি ধরে রাখতে সক্ষম। ভবিষ্যতে নোমান গ্রুপ সিনথেটিক কাপড়, পলিয়েস্টার, এবং সিনথেটিকস নির্ভর ফ্যাব্রিকস তৈরিতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে এবং রফতানি বাজারের আরও বিস্তৃতির দিকে কাজ করছে।